বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধিঃ
রাজশাহীর বাঘা সাব রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখকদের দুই পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইট পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এতে স্থানীয় এক ব্যবসায়ীসহ ১৫ জন আহত হয়েছে। সোমবার (১০ জুন) সকাল সাড়ে ১১টায় সাব রেজিষ্ট্রার অফিসের সামনে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার প্রেক্ষিতে সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের কাজকর্ম ব্যাহত হয় ও আশপাশের দোকানপাট বন্ধ করে দোকানিরা নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়।।
জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে বাঘায় ভূমি রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে দলিল লেখক সমিতির অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও বেপরোয়া চাঁদাবাজি ব্যাপকহারে বৃদ্ধির অভিযোগ উঠেছে। সমিতির হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন জমির ক্রেতা-বিক্রেতারা। দলিল রেজিস্ট্রেশন করতে গেলে সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে সমিতির নামে একটি নির্ধারিত হারে চাঁদা দিতে হয়। ভূমি রেজিস্ট্রেশনের যাবতীয় খরচের টাকাও আদায় হয় সমিতির মাধ্যমে। এতে সাধারণ দলিল লেখকরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন সমিতির নেতাদের কাছে। তারা সমিতির বাইরে গিয়ে কোনো ভূমি রেজিস্ট্রেশন করতে পারছেন না। রেজিস্ট্রি অফিসকে জিম্মি করে সরকারি নির্ধারিত ফিসের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে সমিতি। সাধারণ ও নিরীহ মানুষ অতিরিক্ত টাকা দিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। জমির ক্রেতা ও বিক্রেতাদের জিম্মি করে আদায়কৃত টাকা ভাগ করে নিচ্ছেন সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীসহ ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতা কর্মীরা।
দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে বাঘায় সমিতির নামে এভাবে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করতে হচ্ছে ক্রেতাদের। একেক সময় একেকজন সমিতির নামে সভাপতি-সম্পাদকের চেয়ারে বসেন। তাদের স্বাক্ষরিত স্লিপ না নিলে, সে জমি রেজিস্ট্রি হয় না। সমিতির নামে যে টাকা আদায় করা হয় সেটাও বুঝে পায়না দলিল লেখকরা। বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তুলে দলিল লেখক সমিতির সাথে থাকতে চাননা,সাবেক সভাপতি জহুরুল ইসলাম স্বপনসহ ৭০/৮০ জন দলিল লেখক। এ নিয়ে জহুরুল ইসলাম স্বপনের সাথে সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি শাহিনুর রহমান পিন্টুর সমর্থকদের কথাকাটাকাটি শুরু হয়। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের সমর্থকদের মাঝে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইট পাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। এ সময় উভয় পক্ষের ১৫/২০ জন আহত হয়। আহতরা হলেন, শামিম হোসেন, মাজিদুল ইসলাম, সজল হোসেন, আমিনুল ইসলাম, এনামুল হক, মোস্তফা হোসেন, জয় হোসেন,পারভেজ হোসেন, শাহিন আলম, রাব্বি হোসেন, সনেট আহমেদ, সাইফুল ইসলাম, নাদিম হোসেন, সাজিত আহমেদ, আনজারুল ইসলাম । উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক উম্মে হাবীবা বৃষ্টি জানান, আহতরা চিকিৎসা নিয়ে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে গেছেন।
স্থানীয়রা জানান, আধাঘন্টা ব্যাপি ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে দেন। ইটের আঘাতে রওশনারা হোটেলের সামনের গ্লাস ভেঙ্গে গেছে। সরেরহাট গ্রামের উজ্জল হোসেন বলেন, ক্রয় করা জমি রেজিস্ট্রি করতে না পেরে ফিরে গেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়,সিন্ডিকেটের কারণে বছরের পর বছর ধরে গলাকাটা ফি দিয়ে জমি রেজিষ্ট্রি করেন ক্রেতারা। তাদের ক্ষতির কথা জেনেও প্রতিকারে এগিয়ে আসেনি কেউ।
জহুরুল ইসলাম স্বপন বলেন, সরকার নির্ধারিত ফি ছাড়াও সমিতির নাম ভাঙ্গিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করা হয়। এতে জমি ক্রেতারা ক্ষতিগ্রস্থ হলেও লাভবান হন,যারা সমিতির নামে সভাপতি-সম্পাদকের চেয়ারে বসেন। দলিল লেখকরাও তাদের হিসাব বুঝে নিতে পারেননা।
তিনি জানান,আনোয়ার হোসেন মিল্টনকে বাদ দিয়ে বর্তমানে শাহিনুর রহমান পিন্টু সভাপতি হয়েছেন। এর আগে সভাপতি ছিলেন-আব্দুল লতিফ আর শাহিনুর রহমান পিন্টু ছিলেন সাধারন সম্পাদক। দলিল লেখকদের মতামতের ভিত্তিতে সমিতি গঠন করা হয়না। তাই অনেক দলিল লেখক নামমাত্র সমিতির আওতায় থাকতে নারাজ। কিন্তু সমিতির মাধ্যমেই কাজ কর্ম চালাতে চান এস এম এস এর মাধ্যমে সভাপতির দায়িত্ব পাওয়া শাহিনুর রহমান পিন্টু। এসব নিয়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
শাহিনুর রহামান পিন্টু বলেন, আগে সাধারন সম্পাদক ছিলাম। কয়েকদিন আগে সভাপতি হয়েছি। কিন্তু সমিতির বাইরে চলতে চান সাবেক সভাপতি জহুরুল ইসলাম স্বপন। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে।
এ বিষয়ে আন্দোলনকারী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, মাইনুল ইসলাম মুক্তা ও সানোয়ার সুরুজ বলেন, বাঘায় দলিল লেখক সমিতির নামে মানুষের নিকট থেকে কসাইয়ের মত টাকা আদায় করা হয়। ওই টাকায় খুলে ফেঁপে উঠছেন সভাপতি সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিগণ। আমরা চাই এ ধরনের কোন সমিতি বাঘায় থাকবে না। সম্পূর্ণ সরকারি নিয়মে বাঘা সাবরেজিস্টার অফিসে দলিল সম্পাদিত হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
সাব রেজিস্ট্রার এ.এন নকিবুল আলম বলেন, সাবরেজিস্ট্রি অফিস ভূমি মন্ত্রনালয়ের অধীনে পরিচালিত হয় । ঘটনার প্রেক্ষিতে জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে জমি রেজিস্ট্রি কাজ বন্ধ ছিল। সমিতির বৈধতা নিয়ে জানতে চাইলে বলেন, এ বিষয়টি দলিল লেখকরাই ভালো জানেন। সমিতির মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার বিষয়টি তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান।
বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করা হয়। সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ইউএনও) তরিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি অবগত হয়েছি। বিধি অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৩ দৈনিক আজকের খবর
Leave a Reply