বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর বাঘায় স্কুল স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রোগ্রামের অন্তর্ভুক্ত বাল্য বিয়ের কুফল ও করণীয় শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টার সময় উপজেলার তেঁথুলিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কক্ষে শিক্ষার্থীদের সচেতন করার লক্ষ্যে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনার পরিচালনা করেন বাউসা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মশিউর রহমান।
উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মশিউর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের সচেতন করার লক্ষ্যে সপ্তাহে ৪ দিন বাউসা ইউনিয়নে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সেমিনারে বাল্যবিয়ের পরিণতি, কৈশোরে গর্ভধারণের কুফল এবং কৈশোরকালীন গর্ভধারণ প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।
সামাজিক প্রথাগতভাবে পিতা-মাতা মনে করেন কন্যা সন্তান বড় হয়ে শশুর-বাড়ি চলে যাবে এরা পিতা-মাতার দেখাশুনা করতে পারবে না। তেমনি ছেলে সন্তান বড় হয়ে পিতা-মাতার দেখাশুনা করবে। ফলে ছোট বেলা হতেই কন্যা সন্তান বৈষম্যের শিকার হয় এবং যত তাড়াতাড়ি পারে বিয়ে দিয়ে দেন। ফলে পারিবারিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে নারীর সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার থাকে না । কারণ যাই হোক না কেন, অল্পবয়সে মেয়েদের বিয়ে দিলে সে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ে যা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ।
তিনি আরও বলেন, বাল্য বিয়ের কারণে কিশোর-কিশোরীদের সহজাত উচ্ছ্বাস বৃদ্ধি এবং গতিশীলতাকে থামিয়ে দেয়। বিবাহিত কিশোরীরা স্কুল কলেজ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় এবং লেখাপড়া শেষ করতে পারেনা ফলে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হয়। বাল্যবিয়ের কারণে কিশোরীদের পক্ষে দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণসমূহের সুযোগ গ্রহণ করা সম্ভব হয় না। এছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে যোগাযোগ, বিষয় ভিত্তিক জ্ঞানের অভাব তৈরি হয় যার ফলে নিজস্ব সমস্যা সমাধানে দক্ষতার অভাব থেকেই যায় এবং কোন বিষয়ে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি গঠিত হয় না। তাই বিয়ের পর সন্তান ধারণের জন্য পারিবারিক চাপ বেড়ে যায়।
কিশোরী বয়সেই গর্ভধারণের ফলে মেয়েরা অপুষ্টিতে ভোগে এবং গর্ভকালীন সময়ে বিভিন্ন জটিলতা তৈরি হয়। অপ্রাপ্ত বয়সে সন্তান প্রসবের কারণে মা ও শিশুর মৃত্যুঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। প্রসব ও প্রসব পরবর্তী জটিলতায় ভোগে এবং দীর্ঘস্থায়ী প্রজনন স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরী হয়, ফলে বিবাহ বিচ্ছেদ ও আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ে।পরিকল্পিত পরিবার গঠনের ধারণা থাকে না, যার ফলে অধিক সন্তান গ্রহণের প্রবণতাও তৈরি হয়। বিবাহ আইন সম্পর্কে ধারণা কম থাকে এবং অনেক ক্ষেত্রে আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাবে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ও ধর্মীয় কুসংস্কার তৈরি হয়। তাই বাল্য বিবাহ রোধে এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সচেতনতার উদ্দেশ্যে এ সেমিনার আয়োজন করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, অত্র প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দোলেনা খাতুন সহ অন্যান্য শিক্ষক ও কর্মচারী বৃন্দ।
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৩ দৈনিক আজকের খবর
Leave a Reply