বাঘা( রাজশাহী) প্রতিনিধি:
রাজশাহীর বাঘায় মুস্তাকিন নামের এক শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান আসাদ কে লাঞ্ছিত করেছে স্থানীয় মাইক্রো চালক বুলবুল ও তার সহযোগী অনিক।
শনিবার (০৯ নভেম্বর) সকাল ১১ টায় হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।
এ ব্যাপারে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন আশাদূজ্জামান আসাদ।
অভিযোগসূত্রে জানা যায়, এদিন সকাল ১০.৪০ সময় উপজেলার পৌর সদরের উত্তর মিলিক বাঘা গ্রামের গোলাম মোস্তফার শিশু সন্তান মোস্তাকিন ডায়রিয়া জনিত সমস্যা নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে ভর্তি হয়ে শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
পরে রোগীর খিচুনীসহ অন্যান্য উপসর্গ দেখা দেওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগীকে দ্রুত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেয়া হয় । রোগীর লোক জন বহিরাগত মাইক্রো ড্রাইভার বুলবুলকে সংবাদ দিলে বুলবুল অনিক নামের আরেক যুবককে সাথে নিয়ে এসে কর্তব্যরত নার্সদের সঙ্গে খারাপ আচরন ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ মারমুখী আচরণ করেন । এক পর্যায়ে তারা হাসপাতালে ভাংচুরের উদ্দেশ্য বহিরাগত আরো লোকজন ডাকতে থাকেন। এ সময় রোগীর স্বজনদেরকে রোগী দ্রুত না নিয়ে গেলে মারা যেতে পারে বললে ড্রাইভার বুলবুল ও অনিক আরো বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে কর্তব্যরত নার্সদের উপর চড়াও হন। তখন উপস্থিত আনসার সদস্য ও অন্যান্য স্টাফদের সহযোগীতায় ওয়ার্ডের দরজা বন্ধ করে প্রান রক্ষা করেন। প্রায় আধা ঘন্টা ধরে ড্রাইভার বুলবুল, অনিক সহ আরো লোকজন রোগী না নিয়ে গিয়ে হট্টগোল করতে থাকে। ইতমধ্যে রুগীটি মারা যায়। বিষয়টি জানতে পেয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আশাদুজ্জামান রোগীর কাছে গেলে ড্রাইভার বুলবুল, অনিক সহ নাম না জানা আরো অনেকে তাঁকে মারমুখী হয়ে তেড়ে আসে। এ সময় সেখানে উপস্থিত স্টাফদের সহযোগীতায় তিনি অফিস কক্ষে ফিরে যান। পরে বিষয়টি থানা পুলিশকে অবগত করলে পুলিশ সেখানে হাজির হওয়ার আগেই বুলবুল ও তার সহযোগীরা পালিয়ে যায়।
এ বিষয়ে রোগীর স্বজনদের সাথে কথা বলতে চাইলে কেউ কথা বলতে চান নাই।
অভিযুক্ত ড্রাইভার বুলবুল এ বিষয়ে মুঠোফোনে বলেন, যে রোগীটা মারা গেছে সে আমার আত্মীয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর প্রায় এক ঘণ্টা ধরে রোগীকে কোন চিকিৎসা না দেওয়ায় সে মারা যায়। রোগী মারা যাবার পরে তাকে রাজশাহী নেবার জন্য পরামর্শ দিলে নার্সদের সাথে তর্ক বিতর্ক হয়।এর বেশি কিছু না।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, মোস্তাকিন নামের এক শিশু রোগীকে খারাপ অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসে। ওই সময় জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ আসাদুজ্জামান এর পরামর্শক্রমে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে তার অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য রামেক হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। রোগীর স্বজনরা রোগীকে রাজশাহী নেওয়ার জন্য স্থানীয় বুলবুল কে ডেকে নিয়ে আসে। বুলবুল তার সহযোগী অনিক কে নিয়ে হাসপাতালে কর্তব্যরত নার্স ও স্টাফ সহ আমাকে লাঞ্ছিত করে। অভিযুক্ত বুলবুল ড্রাইভার ইতিপূর্বেও বহিঃবিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসককে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করেছেন। হাসপাতালে আগত রোগীদের জিম্মি করে টাকা আদায় করে চড় থাপ্পড় দিয়ে ছেড়ে দেয়। এছাড়াও হাসপাতালে রোগীদের পথ্য সরবরাহ করতে বাধা প্রদান করেন এবং চাঁদা দাবী করেন।
ড্রাইভার বুলবুলের অসাদাচরন দিন দিন বেড়েই চলেছে। ড্রাইভার বুলবুল সবসময় নেশাগ্রস্থ অবস্থায় থাকে। ড্রাইভার বুলবুলের ভয়ে হাসাপাতালে কর্মরত সকল কর্মকর্তা কর্মচারী প্রানভয়ে শংকায় দিনাতিপাত করছে। তার এহেন আচরন সরকারী কাজে বাধা প্রদানসহ চিকিৎসা সেবা ব্যহত করে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে এবং আমাকে অপমান অপদস্থ করার জন্য পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে এই ধরনের কার্যকলাপ করে বেড়াচ্ছে বিধায় বিষয়টি প্রশাসনিকভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। এছাড়াও বিষয়টি আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি।
এ বিষয়ে বাঘা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু সিদ্দিক বলেন, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।