নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর বাঘায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় আদালতে আরেকটি মামলা হয়েছে। উপজেলার তেপুকুরিয়া গ্রামের আবুল কালাম নামের এক ব্যক্তি বৃহস্পতিবার রাজশাহীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১ নম্বর আদালত ও দ্রুত বিচার আদালতে মামলাটি করেন। এতে বাঘা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৩২ জনের নাম উল্লেখ পূর্বক ১৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
বাদীপক্ষের আইনজীবী জিয়াউর রহমান বলেন, আদালতের বিচারক হাদিউজ্জামান মামলাটি আমলে নিয়ে আদালত বাঘা থানার ওসিকে এজাহার হিসেবে রেকর্ড করার নির্দেশ দিয়েছেন। ২০০২ সালের আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইনে মামলা হয়েছে।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে ‘অনির্বাচিত’ দলিল লেখক সমিতির সভাপতি শাহিনুর রহমানকে (পিন্টু)। ৩ নম্বর আসামি সাধারণ সম্পাদক সামিউল আলম নয়ন সরকার। শাহিনুর রহমান পিন্টু উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক। সামিউল আলম নয়ন সরকার পাকুড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। দুজনই স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের অনুসারী।
এ ছাড়া মামলায় উল্লেখযোগ্য আসামিরা হচ্ছেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি রোকনুজ্জামান,পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল কুদ্দুস,সাধারণ সম্পাদক মামুন হোসেন,থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়াহেদ সাদেক।
দলিল লেখক সমিতির কমিটি নিয়ে বিরোধের জের ধরে গত ২২ জুন বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ৩০ নেতা-কর্মী আহত হন। সংঘর্ষের একপর্যায়ে গুরুতর আহত অবস্থায় উপজেলা চত্বরের ভেতর থেকে আশরাফুল ইসলামকে উদ্ধার করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বুধবার বিকেল মারা যান আশরাফুল।
ওই সংঘর্ষের পরদিন দলিল লেখক সমিতির সভাপতি শাহিনুর রহমান পিন্টু বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় বাঘা পৌরসভার মেয়র আক্কাছ আলী,পাকুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি)চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম,উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল মোকাদ্দেসসহ ৪৬ জনের নাম উল্লেখ তিনশত জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। এ মামলায় মেরাজুলসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার আদালতে হওয়া মামলার এজাহারে বলা হয়েছে,শাহিনুর রহমান পিন্টু ও সামিউল আলম নয়ন সরকার বাঘা সাবরেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বলে দাবি করে আসছেন। তাঁরা আইনগতভাবে স্বীকৃত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক না হওয়া সত্ত্বেও পরিচয় দিয়ে দলিল রেজিস্ট্রি ফির নাম করে ১০ থেকে ১২ গুণ অতিরিক্ত টাকা আদায় করেন।
এলাকার সাধারণ জনগণ বাঘা পৌরসভার মেয়র আক্কাছ আলীর কাছে এর প্রতিকার চান। চাঁদাবাজির প্রতিবাদে ২০ জুন এলাকার লোকজন বাঘা সাবরেজিস্ট্রি অফিসের সামনে মানববন্ধন করেন। সেদিনই ২২ জুন একই দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করার সিদ্ধান্ত নেন।
মামলার এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ২২ জুন সকালে হাজার হাজার লোকের উপস্থিতিতে ও সমর্থনে বাঘা পৌরসভা কার্যালয়ের সামনে থেকে মিছিল বের হয়। সাবরেজিস্ট্রি অফিসের দিকে যাওয়ার সময়ে বাঘা উপজেলা পরিষদের সামনে পৌঁছালে আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা আসামিরা বস্তাভর্তি ইটপাটকেল,লোহার রড,লোহার পাইপ,চায়নিজ কুড়াল,সোয়াপ,বাঁশের লাঠি, হাতুড়ি,ককটেল ইত্যাদি দিয়ে মিছিলে আক্রমণ করেন।
দলিল লেখক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হুকুম দিয়ে বলেন,শালাদের মিছিল করার সাধ মিটিয়ে দে। এটি বলামাত্রই আসামিরা মিছিল লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ করেন এবং ত্রাসের সৃষ্টি করেন। আসামিরা এ সময় মিছিলে থাকা লোকজনকে লোহার রড, পাইপ, ইটপাটকেল দিয়ে হামলা করে জখম করেন। পরে তাঁরা চিকিৎসা নিয়েছেন।
এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে,গত শনিবার সন্ধ্যায় বাঘা থানায় মামলা করতে গেলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেন।
বাঘা থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন,তাঁর কাছে মামলা করার জন্য কেউ আসেননি। আদালতে মামলার বিষয়টি তিনি জানেন না। আদালত থেকে কোনো কাগজপত্র এখনো আসেনি।