নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর বাঘায় পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল (৫০) মৃত্যু বরণ করেছেন । রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার বিকেল ৪টায় তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। পরদিন (বৃহস্পতিবার -২৭ জুন) সকাল ১১টায় চাকুরীরত বাঘা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গনে বাবুল ইসলামের জানাজার নামাজে স্থানীয় সাংসদ সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম হত্যা মামলায় মনগড়া, আক্রমণাত্মক ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত বক্তব্য দেয়ায় ক্ষুব্ধ ও হতাশ হয়েছে এলাকাবাসী। আদালতে প্রমাণ উপস্থাপনের আগেই এমন বক্তব্য প্রকৃত ও মূল আসামিদের রক্ষার আয়োজন হিসেবে দেখছেন সাধারণ জনগন।
তাদের অভিযোগ, একজন সাংসদের এমন দায়িত্ব জ্ঞানহীন বক্তব্য চরম উদ্বেগজনক। এতে করে তদন্ত কর্মকর্তাগন প্রভাবিত হয়ে মূল আসামিদের আইনের বাইরে রাখার সুযোগ পেয়ে যেতে পারেন।
রাজশাহী -৬( চারঘাট -বাঘা) আসনের সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলম বক্তব্যের একাংশে বলেন,” হত্যাকাণ্ডে দুজন স্ব-শরীরে উপস্থিত ছিলেন। খুনি আক্কাস ও খুনি মেরাজ। আর পেছন থেকে মদতদাতা হিসেবে ছিলেন এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, আসাদুজ্জামান আসাদ, পলাতক লায়েব উদ্দিন লাভলু। এদের প্রত্যেককে এই মামলায় আসামি করা হবে। আমরা এদের বিচার না করে রাজপথ থেকে ঘরে ফিরব না।”। শাহরিয়ারর আলমের এমন বক্তব্য যেন আগুনে পেট্রোল ঢালার মতো। তার এই বক্তব্যে গোটা জেলা ব্যাপী সমালোচনার ঝড় বইছে। স্থানীয়রা বলেন, এটা সবার জানা, বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, কেউ যতক্ষণ পর্যন্ত না আদালতের দোষী সাব্যস্ত হবে ততক্ষণ পর্যন্ত কাউকে খুনি বলা যাবে না। কিন্তু তিনি ( শাহরিয়ার আলম) কি করে, একজন নির্বাচিত পৌর মেয়র’র ও ইউপি চেয়ারম্যান কে খুনি সাব্যস্ত করে বক্তব্য প্রদান করলেন। শুধু তাই না, বাংলাদেশ সরকারের একজন সংসদ সদস্য হয়ে আরেকজন সংসদ সদস্য ,আওয়ামী লীগের দুর্দিনের কাণ্ডারি ( রাজশাহী-৩, পবা-মোহনপুর) আসাদুজ্জামান আসাদ,
ও একজন, দলের প্রেসিডিয়াম মেম্বার, জাতীয় চার নেতার অন্যতম এ এইচ এম কামরুজ্জামান হেনার যোগ্য উত্তরসূরী রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খাইরুজ্জামান লিটন সম্পর্কে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, আক্রমণাত্মক, হিংসাত্মক ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে বলেন, এদের প্রত্যেককে আসামি করা হবে , এদের বিচার না করে রাজপথ থেকে ঘরে ফিরব না।
তিনি একথা কিভাবে বলেন? তবে কি তিনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে নিজের পকেটে পুরে রেখেছেন?
স্থানীয়রা আরো বলেন, আমরা এমনও দেখেছি, অনেক হত্যাকাণ্ডের হত্যাকারীই মামলার বাদি হয়। পরে তদন্ত শেষে, মামলার বাদীই প্রধান আসামি হিসেবে সাজা প্রাপ্ত হয়েছে।
এ উপজেলায় গত বাইশে জুন (শনিবার) আওয়ামী লীগের দুই গ্রপের সংঘর্ষ চলাকালীন সময়ে কে বা কার আশরাফুল ইসলাম বাবুলের ওপর হামলা করেছে তার কোনো ক্লু এখনও পাওয়া যায় নাই। এমনকি ওই দিন দুই গ্রুপের সংঘর্ষের শত শত ভিডিও ফুটেজে মেয়র আক্কাস আলী, মেরাজুল ইসলাম মেরাজ সহ তাদের অনুসারীদের কাউকেই বাবুলকে আঘাত করতে দেখা যায়নি। তাহলে শাহরিয়ার আলম কিভাবে এমন দায়িত্বহীন বক্তব্য দিলেন।
অথচ তার নিয়ন্ত্রিত বাঘা উপজেলা দলিল লেখক সমিতির মাধ্যমে জনগণের নিকট থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের পক্ষে বিপক্ষে থাকা না থাকা নিয়ে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হলেও সে সমিতি নিয়ে তিনি কোন কথা বলেন নাই। আমরা প্রশাসনের নিকট দাবি জানাতে চাই, আশরাফুল ইসলাম বাবুলের হামলাকারী যে বা যারাই হোক না কেন, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে তাদের খুঁজে বের করুন, আসল অপরাধী জেনো জল ঘোলা করে পার পেয়ে না যায়।
প্রসঙ্গত, গত ২২ জুন দলিল লেখক সমিতির দৌরাত্ম্য বন্ধের দাবিতে বাঘা উপজেলার সচেতন নাগরিকের ব্যানারে উপজেলা চেয়ারম্যান লাভলু, পৌর মেয়র আক্কাস আলী ও ইউপি চেয়ারম্যান মেরাজুলের সমর্থকেরা বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে। পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে একই দিন বাঘা পৌরসভার মেয়র আক্কাস আলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে মানববন্ধনের ডাক দেয় বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগ। পাল্টাপাল্টি এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হলে আগের দিনই উত্তেজনা দেখা দেয়। ২২ জুন কর্মসূচির জন্য দুপক্ষের কর্মী-সমর্থকেরা জড়ো হতে থাকে । পরে উভয় পক্ষই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
সংঘর্ষের ঘটনায় সেদিন রাতেই থানায় মামলা করেন উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি শাহিনুর রহমান পিন্টু। এ মামলায় বাঘা পৌরসভার মেয়র আক্কাস আলীসহ ৪৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় পুলিশ সাতজনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃত ইউপি চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা মেরাজুল ইসলামসহ গ্রেপ্তারকৃতরা কারাগারে রয়েছেন। আজ (বৃহস্পতিবার) আদালতে
তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন পুলিশ। আদালত একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৩ দৈনিক আজকের খবর
Leave a Reply