রাজশাহী প্রতিনিধি :
পোষ ও মাঘ শীতকাল। বাংলাদেশে এ দুই মাসে শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে ছিন্নমূল মানুষের জীবন। সমাজের যারা দানশীল ব্যক্তি তারা এ সময় শীতার্তদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন কম্বল বিতরণের মাধ্যমে। তাই ওই সময়ে যারা কম্বল বিতরণ করেন তাদের প্রতি মানুষ কৃতজ্ঞতায় শীক্ত হয়। কিন্তু সেই কম্বল যদি বিতরণ করা হয় তীব্র গরমে,
তাহলেতো বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। এমনই এক সমালোচনার ঝড় বইছে রাজশাহীর বাঘায়।
জানা যায়, শুক্রবার (২৪ মে) বাদ জুম্মা শীতের কম্বল বিতরণ করেছেন বাঘা পৌর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মামুন হোসেন। এদিন তিনি তার নিজ বাড়িতে বসে প্রায় ৩০০ জন দরিদ্র মানুষের মাঝে ব্যক্তিগতভাবে কম্বলগুলো বিতরণ করেন।
এ সময় কম্বল হাতে মানুষ নিজ নিজ বাড়িতে ফেরার পথে স্থানীয় কয়েকজন কম্বল সহ ছবি ও ভিডিও করে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের দেয়। এছাড়াও বিষয় টি নিয়ে পাড়া মহল্লায়,হাট-বাজারে এমন কি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও শুরু হয় আলোচনা -সমালোচনা ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি মন্তব্য করে বলেন- এ সময় ৩শত কম্বল বিতরণ না করে যদি ৩০টি ফ্যান বিতরণ করলে ভালো হতো। এছাড়াও বাঘায় বর্তমান সময়ে তীব্র তাপদাহে ভূগর্ভস্থ পানির লেয়ার নিচে নেমে যাওয়ায় টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। যাদের সামর্থ্য আছে তারা সাব-মার্সিবল( জল মটার) বসিয়ে পানির সংকট নিরসন করছে। কিন্তু যারা নিম্ন আয়ের মানুষ, তারা প্রচন্ড কষ্টে আছে।
তাই, এই সময়ে শীতের কম্বল বিতরণ না করে গরীব মানুষের মাঝে যদি কিছু সাবমারসিবল ( জল মটার) বিতরণ করা হতো তাহলে ভালো হতো।
কেউ কেউ বলেন, নিঃসন্দেহে যে কোন দান ভালো কাজ। তবে শীত শেষে জৈষ্ঠ্য মাসে এসে কম্বল বিতরণ, এটা হাস্যকর ছাড়া আর কিছুই নয়।
বাঘা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সানোয়ার হোসেন সুরূজ বলেন, আগামী ৫ই জুন বাঘা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। নির্বাচনে মামুন হোসেন প্রত্যক্ষভাবে আনারস প্রতীকের ভোট করছেন। ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী ভোটের আগে কোনরকম অনুদান, বস্ত্র বিতরণ করা যাবে না। তবুও মামুন হোসেন আজ কম্বল বিতরণ করেছেন। আমরা মনে করছি, ভোটকে প্রভাবিত করতেই গরমের সময় আনারস প্রতীকের পক্ষে কম্বলগুলো বিতরণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কম্বল বিতরণকারী মামুন হোসেন বলেন, সমাজে এক শ্রেণীর মানুষ আছে, যাদের কাজ অন্যের সমালোচনা করা। আমি প্রতি শীতেই কয়েক হাজার অসহায় মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করে থাকি। এ বছর আমি অসুস্থতার কারণে ভারতে অবস্থান করায় আমার নীজ অর্থায়নে ক্রয়ঃকৃত কম্বলগুলো বিতরণ করতে পারি নাই। ইচ্ছে ছিল আগামী শীতে বিতরণ করবো। কিন্তু ইঁদুর ও তেলাপোকা কম্বলগুলো কেটে ফেলছে বিধায় আজ বিতরণ করেছি। এ বছর না হোক সামনে বছর শীতে ব্যবহার করবে, এতে ক্ষতি কি।
কম্বল পাওয়া এক বিধবা নারীসহ কয়েকজন বলেন, এ বছর শীতে অনেক কষ্ট পাইছি। কম্বলটি তখন পেলে ভালো হতো। তবুও আমরা খুশি। আল্লাহ যদি বাঁচিয়ে রাখে আগামী শীতে ব্যবহার করতে পারবো।
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৩ দৈনিক আজকের খবর
Leave a Reply