আজকের খবর নিউজ ডেস্ক: বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) জানিয়েছে, দেশের বৈদেশিক ঋণ এবং ঋণ পরিশোধের বাধ্যবাধকতার হার বাড়ছে, যা সরকারকে অপর্যাপ্ত রাজস্ব আদায়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধের জন্য ক্রমাগত নতুন ঋণ নিতে বাধ্য করছে। সংস্থাটির মতে, ২০২৩ সালের জুনে বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি বিদেশি ঋণ ছিল ৯৮ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে তা ১০০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে।
গতকাল রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে দেশের বৈদেশিক ঋণ পরিস্থিতি নিয়ে সিপিডি ও এশিয়া ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আসা রাজস্ব দিয়ে উন্নয়ন খরচের জোগান দেওয়া যাচ্ছে না। এমনকি ঋণ করে ঋণ পরিশোধ করা হচ্ছে। কারণ সরকার রাজস্ব বাজেটের যে হিসাব দেয়, তাতে শুধু সুদ বাবদ বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেখানে ঋণের আসল পরিশোধ বাবদ বরাদ্দ থাকে না।
এর মানে ঋণের বড় অংশ আমরা ঋণ করে পরিশোধ করছি। তিনি আরও বলেন, প্রকৃতপক্ষে আমরা পাবলিক ও পাবলিকলি গ্যারান্টিযুক্ত ঋণের দায়বদ্ধতার একটি বড় অংশ পরিশোধের জন্য ঋণ নিচ্ছি। তাই দ্রুত অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ বাড়ানো ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। তিনি আরও জানান, বর্তমানে বিদেশি ঋণ-জিডিপি অনুপাত ২১ দশমিক ৬ শতাংশ। তুলনামূলকভাবে এটা বেশি নয়। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ঋণ শোধ করতে
(প্রথম পৃষ্ঠার পর) জিডিপি, রাজস্ব আয়, রপ্তানি, রেমিট্যান্স ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্গে তুলনা করলে বৈদেশিক ঋণ ও ঋণ পরিশোধের দায়বদ্ধতার দ্রুত বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে মোস্তাফিজুর রহমান আরও জানান, ঋণ পোর্টফোলিওর গঠন দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। রেয়াতি ঋণের অনুপাত কমছে, অন্যদিকে রেয়াতি ও বাজারভিত্তিক ঋণের অংশ বাড়ছে। ঋণের শর্তাবলি আরও কঠোর হচ্ছে। ঋণ বহনের সক্ষমতা ও ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা উদ্বেগ তৈরি করেছে। দিন শেষে অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ গুরুত্বপূর্ণ, যা অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি উভয় ঋণ পরিশোধের জন্য বিবেচনা করতে হবে। অভ্যন্তরীণ সম্পদের একটি ক্রমবর্ধমান অংশ দেশি ও বিদেশি ঋণের মূল ও সুদ পরিশোধে ব্যবহার করা হচ্ছে।
সরকারের দায়দেনা পরিস্থিতি বুঝতে হলে বৈদেশিক ঋণের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ ঋণও দেখতে হবে উল্লেখ করে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, মূল আলোচনায় সরকারি ঋণের পরিস্থিতি উঠে এসেছে। আরও আছে ব্যক্তি খাতের ঋণ। যদি ১০০ শতাংশ ঋণ নিয়ে থাকেন, তার ৮০ শতাংশ সরকারের। ২০ শতাংশ ব্যক্তি খাতের। ব্যক্তি খাতের ঋণেরও তাৎপর্য আছে। কারণ এটা দায়দেনা ও বিনিময় খাতে প্রভাব রাখে। ব্যক্তি খাতের ঋণের অবস্থা কী, কেউ বলতে পারবেন? এই টাকা কেউ কেউ বিদেশে নিয়ে গেছেন। কেউ ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করেছেন। এই হিসাবটা কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
সরকার দেশের ভেতরেও ঋণ নিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, যে ঋণ আমরা বিদেশ থেকে নিই, তার দ্বিগুণ
নিই দেশ থেকে। সরকারের এখন যে ঋণের পরিমাণ তার দুই তৃতীয়াংশ অভ্যন্তরীণ ঋণ, সেটিই বড় বিষয়। বৈদেশিক ঋণের কারণে মাথাপিছু দায়দেনা যদি ৩১০ ডলার হয়, তার সঙ্গে অভ্যন্তরীণ ঋণ যোগ করলে সেটা বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ৮৫০ ডলার। তিনি আরও বলেন, ২০১৮-১৯
সালের পর থেকে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা কোভিড মহামারী, ইউক্রেন বা গাজা যুদ্ধের কারণে নয়, ভিন্ন কারণে ত্বরান্বিত হয়েছে। সেজন্য আমাদের উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ হয়েছে। ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা এই জায়গায় গেছে যে, রেভিনিউ বাজেট থেকে উন্নয়ন প্রকল্পকে অর্থায়ন করতে একটা পয়সা দিতে পারি না। শ্রীলংকা স্বল্পমেয়াদি ঋণের ফাঁদে পড়েছিল। ভালো অবস্থানে থাকলেও বাংলাদেশেও এমন ঋণ বাড়ছে বলে জানান সিপিডির চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ প্রফেসর রেহমান সোবহান। তিনি বলেন, রপ্তানি কমে আসায় এসব ঋণ যথাযথভাবে পরিশোধ করতে পারেনি শ্রীলংকা। আফ্রিকার কিছু দেশেও এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ তেমন অবস্থানে নেই। কিন্তু দেশে স্বল্পমেয়াদি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। তিনি আরও যোগ করেন, দেশের মেগা অবকাঠামো প্রকল্পগুলো বিদেশি ঋণে করা হচ্ছে। ঋণ করে প্রকল্প করলে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ খরচ বেড়ে যায়। এখানে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য, প্রকল্পের খরচ বৃদ্ধি এবং ব্যবস্থাপনা বড় ইস্যু হয়ে যায়।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ। সূত্র: আমাদের সময়
।