আজকের খবর ডেস্কঃ
গত তিন মাসে ৮১ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হয়রানি, হুমকি, মামলা ও পেশাগত কাজ করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। তিন মাসে বিভিন্ন বয়সী ১১৪ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে ধরে আসক বলছে, এ সময়কালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু, সীমান্তে হত্যা, সাংবাদিক নিপীড়নসহ মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা প্রদানের মতো ঘটনার মধ্য দিয়ে মানবাধিকার লক্সঘনের ঘটনা ঘটে চলেছে।
প্রতিবেদনে দেশ রূপান্তরের শেরপুরের নকলা সংবাদদাতা শফিউজ্জামান রানাকে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কার্যালয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ছয় মাসের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর ঘটনা উল্লেখ করে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে একজন সাংবাদিককে কারাগারে প্রেরণ রাষ্ট্রের সরকারি কর্মকর্তাদের ক্ষমতা প্রদর্শনের যে অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ বিদ্যমান রয়েছে, এই ঘটনা তারই বহিঃপ্রকাশ।
প্রতিবেদনে গত ১৪ মার্চ লালমনিরহাট জেলার সদর থানার এসি ল্যান্ডের কার্যালয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে ৫ জন সাংবাদিকের লাঞ্ছিত হওয়া, ময়মনসিংহ নগরীর সমস্যা নিয়ে পোস্টার এবং গ্রাফিতির মাধ্যমে সিটি করপোরেশনের দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রতিবাদ করায় কবি ও গ্রাফিক ডিজাইনার শামীম আশরাফকে গ্রেপ্তার, জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে ৪ সাংবাদিক মারধরের ঘটনা, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ১৩ জন সাংবাদিকের বাধার সম্মুখীন হওয়ার মতো ঘটনা উঠে এসেছে।
আসকের প্রতিবেদনে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের ঘটনা উল্লেখ করে বলা হয়, দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠগুলোতে এ ধরনের অভিযোগ অগ্রহণযোগ্য এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এছাড়া পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনে ঢাকার লালবাগ এলাকায় মো. ফারুক হোসেনের মৃত্যুর ঘটনা উদঘাটনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করা আবশ্যক বলে মনে করে আসক।
রাজনৈতিক সহিংসতার বিষয়ে আসকের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিগত তিন মাসে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচন কেন্দ্রীক সহিংসতাসহ বিভিন্ন জায়গায় রাজনৈতিক সংঘাত ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে মোট ২৬৮টি। এতে নিহত হয়েছেন ২৩ জন এবং আহত হয়েছেন প্রায় ২৩৬৮ জন।
এছাড়া তিন মাসে কারা হেফাজতে ৩৫ জন মারা গেছেন বলে আসকের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এর মধ্যে কয়েদি ১৪ জন এবং হাজতি ২১ জন। তিন মাসে ২০টি ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ১৩টি বাড়িঘরসহ ২টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দুর্বৃত্তদের হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে আসক। এছাড়া ১৫টি প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনাসহ বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ১টি মন্দিরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
গত তিন মাসে যৌন হয়রানি কেন্দ্রিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৭৯ জন নারী-পুরুষ, যাদের মধ্যে হামলার শিকার হয়েছেন ৫৫ জন নারী ও ২৪ জন পুরুষ। এর মধ্যে বখাটেদের কর্তৃক লাঞ্ছিত ৪৫ জন, বখাটেদের উৎপাতকে কেন্দ্র করে সংঘাতে আহত হয়েছেন ২৬ জন। যৌন হয়রানির কারণে ১ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন।
অন্যদিকে, যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে বখাটে কর্তৃক ৪ জন পুরুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন মোট ১১৪ নারী। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৩ জন নারীকে। ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন ১ জন নারী। এছাড়া ৩১ জন নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছে। পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মোট ১৩৭ জন নারী। এর মধ্যে ৬৫ জন নারীকে হত্যা করা হয়েছে। পারিবারিক নির্যাতনের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৪৯ জন নারী।
দেশের বিভিন্নস্থানে গত তিন মাসে মোট ৩২৫ শিশু বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন ও হত্যার শিকার হয়েছে। এরমধ্যে হত্যার শিকার হয়েছে ১৩৯ শিশু এবং ১ জন ছেলে শিশুকে বলাৎকারের পর হত্যা করা হয়েছে। আত্মহত্যা করেছে ২৭ শিশু, বিভিন্ন সময়ে মোট ৩২ শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, এছাড়া বলাৎকারের শিকার হয়েছে ১৪ ছেলে শিশু এবং বলাৎকারের চেষ্টা করা হয়েছে ১ জন শিশুকে।
এছাড়া তিন মাসে সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফের গুলি ও নির্যাতনে নিহত হয়েছেন ৬ বাংলাদেশি। আহত হয়েছেন ৪ জন। অন্যদিকে, মিয়ানমার সীমান্তে মর্টার শেলের আঘাতে ১ জন বাংলাদেশি নাগরিক এবং বাংলাদেশে আশ্রিত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ১ জন নিহত হন। তিন মাসে গণপিটুনীর ঘটনায় নিহত হন মোট ১৭ জন।