আজকের খবর নিউজ ডেস্কঃ
বাড়তে যাচ্ছে দ্বাদশ সংসদের মন্ত্রিসভার আকার। আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের ভাষ্য, মন্ত্রিসভার আকার বাড়ছে মূলত চারটি ভাবনা থেকে। এর মধ্যে রয়েছেÑ সাম্প্রদায়িকতা, দুর্নীতি ও মাদকের প্রতি ‘জিরো টলারেন্স’; দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ; নারীর ক্ষমতায়ন এবং স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে যাত্রা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রিসভার আকার বাড়ানোর প্রক্রিয়া অনেক দূর এগিয়েছে। সে ক্ষেত্রে একজন নারী সংসদ সদস্য মন্ত্রিসভায় জায়গা পেতে পারেন; মন্ত্রিত্ব পেতে পারেন সংরক্ষিত আসনের একাধিক সদস্যও। মন্ত্রিসভায় সাবেক একজন আমলা, একজন নাট্যব্যক্তিত্ব ও একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের যুক্ত হওয়ার গুঞ্জনও আছে। এ ছাড়া ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগ থেকেও নতুন মুখ আসতে পারে বলে একাধিক সূত্র আভাস দিয়েছে।
গত ১১ জানুয়ারি ৩৭ সদস্যের নতুন মন্ত্রিপরিষদ গঠন করা হয়। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী বাদে পূর্ণ মন্ত্রী ২৫ জন; প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন ১১ জন। মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী মিলিয়ে আগের মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ছিলেন ৪৮ জন। এবার উপমন্ত্রী হিসেবে কাউকে রাখা হয়নি।
আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, মন্ত্রিসভার আকার বাড়বে, এটা নিশ্চিত। তবে কতজন বাড়বে, সে বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হয়নি। সংরক্ষিত আসন থেকে এক বা দুজন মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেতে পারেন বলে দলের নীতি-নির্ধারণী মহল থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রিসভায় কয়জন নতুন সদস্য আসতে পারেন এ নিয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ মহলে নানা রকম আলোচনা আছে। কেউ বলছেন, ১০ থেকে ১২ জনআবার কেউ বলছেন ৬ জন। তবে সংখ্যা যা-ই হোক, প্রত্যেক সদস্যের স্বতন্ত্র পরিচয় আছে, সংশ্লিষ্ট কাজে অভিজ্ঞতা আছে, সততার প্রশ্নে উত্তীর্ণ এমন মানুষদের মন্ত্রিসভায় আনা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন। তাদের ভাষ্য, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারঙ্গম ব্যক্তি, শ্রম ও শিল্প এবং সংস্কৃতি অঙ্গনের পরিচিত এবং অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের এনে আগামীর বাংলাদেশ গঠনে কাজ করবে সরকার। আওয়ামী লীগ নেতাদের ভাষ্য, দলের ইশতেহার বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যখন যেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার তা নিতে তিনি কার্পণ্য করবেন না।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গত সোমবার সচিবালয়ে বলেন, ‘মন্ত্রিসভার কলেবর বাড়লে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব কাউকে দেওয়া হবে। সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচিত কাউকে সেখানে দেখা যেতে পারে। এটা আমার মনে হয় সংরক্ষিত মহিলা আসনগুলো আসার পরে মন্ত্রী আসতে পারে। সেখানে মহিলাও আসতে পারে। তবে এটা প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ারে, তিনি এটা করবেন।’
গুঞ্জন আছে, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও নাট্যজন লাকী ইনামের মধ্য থেকে কেউ একজন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আসতে পারেন। নারী মন্ত্রী আসতে পারে শ্রম মন্ত্রণালয়েও; সেটা হতে পারে চট্টগ্রাম বিভাগের কেউ। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব আহমদ কায় কাউসকে মন্ত্রিসভায় আনা হতে পারে বলেও আলোচনা আছে।
মন্ত্রিসভার আকার কবে বাড়তে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সরকারি সফরে জার্মানি যাচ্ছেন। সেখান থেকে ফিরে মন্ত্রিসভার আকার বৃদ্ধির বিষয়টিতে হাত দেবেন।’
দলের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্যের ভাষ্য, ‘মন্ত্রিসভায় এবং সংসদীয় আসনে নারী সদস্য বাড়িয়ে নারীর ক্ষমতায়নে আরেক ধাপ এগিয়ে নেবে বর্তমান সরকার।’
নতুন সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গীকারের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে রয়েছে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন। সেখানে চারটি বিষয় রয়েছেÑ স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি। এই সরকারের পর আর কোনো গৃহহীন মানুষ থাকবে না।’ তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দেওয়ার পর থেকে নিত্যপণ্যের বাজারের বিষয়ে ইতোমধ্যে সিন্ডিকেটগুলোকে চিহ্নিতকরণ, চাঁদাবাজদের চিহ্নিতকরণ এবং তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে। মন্ত্রণালয়ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে সতর্ক।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার ও দলের করণীয় বিষয়ে নিয়মিত দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। তিনি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সরকারের কঠোর নীতির বিষয়টিও বারবার মনে করিয়ে দেন। সর্বশেষ ১০ ফেব্রুয়ারি গণভবনে অনুষ্ঠিত দলের বিশেষ বর্ধিত সভায় শেখ হাসিনা সারাদেশের নেতৃবৃন্দের উদ্দেশে বলেন, ‘মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। ওই অনুষ্ঠানে তিনি জানিয়ে দেন, নির্বাচনী ইশতেহার স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে বিভেদ ভুলে কাজ করতে হবে।’
আওয়ামী লীগের আরেক সভাপতিম-লীর সদস্য বলছেন, নতুন সরকারের প্রত্যেকটা সদস্যকে এবার পরিকল্পিতভাবে বসানো হয়েছে। বাকিদেরও আনা হচ্ছে পরিকল্পনামাফিকই। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের যুদ্ধ আছে এবং থাকবে। সেই সঙ্গে যুক্ত হবে কালোবাজারি, অর্থপাচারকারী ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে উত্তীর্ণ হতেই মন্ত্রিসভার বাদবাকি সদস্যদের আনা হচ্ছে। নারীদের ক্ষমতায়নের বিষয়ে বঙ্ তিনি জানিয়ে দেন, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের ইশতেহার স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে বিভেদ ভুলে কাজ করতে হবে।’
সূত্র: আমাদের সময়