নিজস্ব প্রতিবেদক :
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আলোচিত হয়ে উঠেছে রাজশাহী-৪ বাগমারা আসন। হামলা মামলা এখন বাগমারা আসনটিতে নিত্যদিনের সঙ্গি। প্রতিনিয়ত বাগমারায় হামলার ঘটনা ঘটছে। বলাই যায় এক সময়ের রক্তাক্ত বাগমারায় শান্তির সুবাতাস এলেও আবারো অশান্ত হয়ে উঠেছে। এ আসনটিতে বর্তমান সংঘাত, হামলা, মামলার ঘটনা সব চেয়ে বেশি। প্রতিনিয়ত মারপিট, হামলার ঘটনা ঘটছে। এতে শান্ত বাগমারা আবারো অশান্ত হয়ে উঠেছে। ডিসি এসপিকে দেয়া প্রতিশ্রুতিও মানা হচ্ছে না।
গত ২৫ ডিসেম্বর ডিসি ও এসপির কাছে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সংঘাতে না জড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু দিন না গড়াতেই শুরু হয় হামলা।
বাগমারার এ আসনটিতে গত ১৫ বছর যাবৎ রাজত্ব করে এসেছেন ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক। কিন্তু এবার তিনি নৌকা থেকে ছিটকে পড়েছেন। এবার এই আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নটি বাগিয়ে নিয়েছেন বাগমারার তাহেরপুর পৌর সভার মেয়র আবুল কালাম আজাদ। এনামুল হক নৌকা থেকে ছিটকে পড়লেও স্বতন্ত্র প্রার্থী (কাঁচি প্রতিক) হিসাবে নির্বাচন করছেন। এছাড়াও এ আসনটিতে রয়েছে বেশ কয়েকজন প্রার্থী। তবে এ আসনে আলোচনায় রয়েছে আওয়ামী লীগেরই দুই প্রার্থী। আর এই দুই প্রার্থীর মধ্যেই হবে ভোট যুদ্ধ।
জানা গেছে, ২০০৮ সালে বাগমারা আসনটি দখলে নেয় ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক। এরপর টানা তিনবার তিনি এমপি নির্বাচিত হয়েছে। তিনি নির্বাচিত হয়ে রক্তাক্ত জনপদ নামে খ্যাত বাগমারাকে শান্তির বাগমারায় রুপ দিয়েছেন। একই সাথে একই ২০০৯ সালে তাহেরপুর পৌর সভায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে অংশ নিয়ে নির্বাচিত হন আবুল কালাম আজাদ। তিনিও টানা তিনবার পৌর মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। এবার তিনি পৌরসভার ছেড়ে সংসদ নির্বাচনে নৌকার হাল ধরেছেন।
মূলত বিভিন্ন কারণে এনামুল হক এবার এ আসনটি পাননি বলে বাগমারাবাসীর ধারণা। আর তিনি দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় প্রথম দিকে বাগমারাবাসি অনেকটাই উচ্ছাশিত, আনন্দিত ছিলো। পক্ষান্তরে তাহেরপুর পৌর মেয়র আবুল কালাম আজাদ আসনটিতে মনোনয়ন পাওয়ায় পুরো বাগমারায় ছিল আনন্দের জোয়ার। আবুল কালাম আজাদ দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় বাগমারার ইয়াং জেনারেশন পুরোটাই তার পক্ষে কাজ শুরু করে। কিন্তু সময় গড়ানোর সাথে সাথে বাগমারা এ আসনটির প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হতে থাকে।
জানা গেছে, দলীয় মনোনয়ন পাওয়া থেকে প্রতীক বরাদ্দের পর বাগমারায় যে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটছে তা নিয়ে এখন বাগমারার সচেতন মানুষ ভাবতে শুরু করেছে। আবুল কালাম আজাদ দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর শান্ত বাগমারা আবারো অশান্ত হয়ে উঠে। তার সমর্থকদের একের পর এক হামলা, ভাংচুরের ঘটনা বাগমারা হয়ে উঠেছে অশান্ত। এখন পর্যন্ত নৌকার সমর্থকদের হামলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুলের অন্তত অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। প্রতিদিন এনামুলের সমর্থকদের উপর হামলার ঘটনা ঘটছে। এ হামলার ঘটনায় ইতিমধ্যে মামলাও হয়েছে। এছাড়াও নিরাপত্তার জন্য আবুল কালাম আজাদ ও এনামুলকে গানম্যান দেয়া হয়েছে। গানম্যান দেয়ার ঘটনাটি এখন আলোচনার শীর্ষ। কারণ এর আগে বাগমারায় কোনো নির্বাচনে নিরাপত্তার জন্য প্রার্থীকে গানম্যান দেয়া হয়নি। বর্তমান এ প্রেক্ষাপট বাগমারার প্রবীণ আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে সাধারণ ভোটাররাও নতুন করে ভাবতে শুরু করছে। সাধারণ ভোটাররা বলছেন, গত ১৫ বছর বাগমারা ছিল শান্ত, আমরা সেই শান্তির বাগমারাই চাই, শান্ত বাগমারায় বসবাস করতে চাই না। আমরা অস্ত্রের ঝনঝনানি শুনতে চাই না।
ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রথম দিকে নৌকার পালে হওয়া বেশি ছিল। কিন্তু এখন স্বতন্ত্র প্রার্থীর পালই বেশি ভারি বলে মনে করছেন ভোটাররা। এতে ঈশ^ান্বিত হয়েই নৌকার প্রার্থী স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের উপর হামলা চালাচ্ছে। এমন অনাকাঙ্খিত ঘটনায় গত ২৫ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার এই দুই প্রার্থীকে ডাকেন। সেখানে তারা সংঘাতে জড়াবেন না মর্মে প্রতিশ্রুতি দেন। যদিও এই প্রতিশ্রতি ডিসি এসপির অফিস পর্যন্তই সীমাবদ্ধ রয়েছে। প্রতিশ্রতি দিলেও একদিন পরই রাতে নৌকার প্রার্থীর সমর্থকরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের উপর হামলা চালিয়ে মারপিট করে আহত করে।
এদিকে বাগমারার সাধারণ ভোটাররা বলছেন, নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদকে এবার নির্বাচনে জয়ী হতে হলে সংঘাতের পথ পরিহার করতে হবে। তার সমর্থকদের মুল ধারায় ফিরে আসতে হবে। নইলে এই আসনে নৌকা বিজয়ী হওয়ার সম্ভবনা নেই। কারণ স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হকের ভোট ব্যাংক রয়েছে এ আসনে। তার সাথে আছে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। সেই হিসাবে এখন পর্যন্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল নৌকার প্রার্থীর চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছেন। আর নৌকার প্রার্থীর সাথে হাতে গোনা কয়েকজন আ.লীগের নেতা রয়েছে। যারা স্বতন্ত্র প্রার্থীর ভোটে কোনো প্রভাব ফেলাতে পারবে না। এনামুলকে পরাজিত করতে হলে নৌকার প্রার্থীকে সংঘাত পরিহার করে তার ভোট ব্যাংক ভাঙ্গার চেষ্টা করতে হবে। নইলে এ আসনে নৌকার নিশ্চিত পরাজয় হবে এমনটাও মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা।
অপরদিকে নৌকা ছেড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালানোর অভিযোগে উপজেলা আওয়ামীগের নেতৃবৃন্দ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, ভবানিগঞ্জ পৌর মেয়র, উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র পদস্থ নেতা, বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ ১৬ জনকে বহিষ্কার করেছে। যদিও উপজেলা আওয়ামী লীগ জেলা আওয়ামী লীগের কোনো পদস্থ নেতাকে বহিষ্কার করতে পারে না। তারপর বিধি ভেঙ্গে তাদের বহিস্কার করা হয়েছে। এতে এ আসনে রাজনীতিতে নতুন মোড় নিয়েছে।
এব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল কুমার সরকার বলেন, তারা আমাদের বহিষ্কার করতে পারে না। তারা যেটা করেছে সেটা গঠনতন্ত্র পরিপন্থী। তিনি বলেন শুরু থেকেই নৌকার প্রার্থী বেয়াড়া চলাফেরার কারণে এসব শীর্ষ নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষ নিয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা গঠনতন্ত্র পরিপন্থী আমাদের বহিষ্কার করেছে।