অনলাইন ডেস্ক: প্রকল্প অনুমোদনের দুই বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এখনো বাস্তব অগ্রগতি শূন্য। তবে প্রাথমিক কাজ এগিয়েছে। সেই সঙ্গে খরচও হয়েছে কিছু টাকা। ফলে আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৩৬ শতাংশে। এদিকে নিয়ম থাকলেও এত বড় প্রকল্পে রাখা হয়নি ‘নির্মাণকালীন রক্ষণাবেক্ষণ’ খাতে বরাদ্দ। এখন সংস্কার কাজের অভাবে তৈরি হয়েছে জটিলতা। এ পরিপ্রেক্ষিতে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন ও ব্যয় বৃদ্ধির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ‘সাসেক ঢাকা-সিলেট করিডর সড়ক উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পে বিরাজ করছে এ অবস্থা। ২৪ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভা। সেখানে এসব বিষয় আলোচনা করা হয়। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক একে মোহাম্মদ ফজলুল করীম বুধবার বলেন, এই প্রকল্পে সবকটিই আন্তর্জাতিক দরপত্র। ফলে ধাপে ধাপে প্রক্রিয়াকরণ এবং কাজ দেওয়া পর্যন্ত প্রায় এক বছর সময় চলে গেছে। এখন আমরা একটা অবস্থানে এসেছি। বাস্তব কাজও কিছু কিছু শুরু হয়েছে। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করা যাবে। এরপরও যদি সমস্যা হয়, খুব বেশি হলে এক বছর মেয়াদ বাড়ানো লাগতে পারে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রকল্পের শুরুতেই সংস্কার কাজের জন্য বরাদ্দ রাখা থাকলে এখন কোনো সমস্যা হতো না। তবে পিআইসি আমাদের সিদ্ধান্ত দিয়ে বলেছে সংস্কার কাজ করতে। সেই সঙ্গে এ খাতে কত টাকা লাগতে পারে তার একটি প্রতিবেদন দিতে বলেছে। আমরা সেটি করছি। এতে প্রায় ২০০-২৫০ কোটি টাকা লাগতে পারে। এই টাকা বরাদ্দের বিষয়ে পরবর্তী সময়ে প্রক্রিয়াকরণ করা হবে।
সূত্র জানায়, ‘সাসেক ঢাকা-সিলেট করিডর সড়ক উন্নয়ন’ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৯১৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৩ হাজার ৬৭৩ কোটি ৮৯ লাখ এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ থেকে ১৩ হাজার ২৪৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকল্পটি অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফিন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তফা কে. মুজেরী বুধবার যুগান্তরকে বলেন, এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ পাঁচ বছর। অথচ এর মধ্যেই প্রায় অর্ধেক সময় চলে গেছে। এর মানে হলো অবশ্যই আগামীতে মেয়াদ ও ব্যয় বড়বে। কেননা তখন যে প্রাক্কলন করা হয়েছিল এখন সেটি ঠিক থাকার কথা নয়। ওই সময়ই যদি কাজগুলো শুরু হতো তাহলে হয়তো বাড়তি টাকা না-ও লাগতে পারত। সেই সঙ্গে তখন যে কস্ট বেনিফিট অ্যানালাইসিস করা হয়েছিল এখন সেটি অকার্যকর হবে। সময় মতো প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে যে সুফল মিলত এখন তা পেতে অপেক্ষা করতে হবে। সব দিক থেকেই দেখা যাচ্ছে জনগণের করের টাকার অপচয় বা অপব্যয়ের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে দায়ী করতে হবে। পাশাপাশি যাদের কারণে দেরি হয়েছে তাদের খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। পিআইসি সভা সূত্র জানায়, সভায় প্রকল্প পরিচালক বলেন, বর্তমানে প্রকল্পটির আওতায় মোট ১৩টি পূর্ত প্যাকেজের মধ্যে ১০টির কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। বাকি দুটি প্যাকেজের মূল্যায়ন প্রতিবেদন সিসিজিপি (সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি) অনুমোদন দিয়েছে। এছাড়া একটি প্যাকেজের দরপত্র মূল্যায়ন প্রক্রিয়া চলমান। তিনি সভাকে জানান, চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা। তবে প্রকল্পটি অনুমোদনের পর থেকে ঢাকা-সিলেট জাতীয় মহাসড়কে দুই বছর ধরে রক্ষণাবেক্ষণ না করায় সম্প্রতি অতিবৃষ্টিতে সড়কটি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রকল্পের ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) ‘নির্মাণকালীন রক্ষণাবেক্ষণ’ নামে পৃথক কোনো দফা অন্তর্ভুক্ত নেই। তবে অন্য সাবহেডে এ ধরনের কাজের জন্য বরাদ্দ আছে ৭৮ কোটি টাকা। এই অর্থ মহাসড়কটির পেভমেন্টের যে অবস্থা হয়েছে তা সংস্কারে অপ্রতুল।
এ প্রসঙ্গে সভায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ব্রিজ ম্যানেজমেন্ট উইং) শিশির কান্তি রউথ বলেন, এ ধরনের প্রকল্পে আবশ্যিকভাবে নির্মাণকালীন রক্ষণাবেক্ষণ দফাটি থাকা প্রয়োজন ছিল। এ সময় তিনি জানতে চান, কেন দীর্ঘদিন সড়কটি মেরামতের কর্মসূচি নেওয়া হয়নি। কেন এ খাতে অর্থ রাখা হয়নি। এর জবাবে প্রকল্প পরিচালক একে মোহাম্মদ ফজলুল করীম জানান, যখন প্রকল্পটি নেওয়া হয় তখন মহাসড়কটির অবস্থা তুলনামূলক ভালো ছিল। তাই এটি ধরা হয়নি। তবে বিভিন্ন স্থানে ঠিকাদাররা রক্ষণাবেক্ষণ করছেন। কিন্তু সড়কটির বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এই রক্ষণাবেক্ষণ যথেষ্ট নয়।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসান সভায় বলেন, ঢাকা-সিলেট জাতীয় মহাসড়কটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক। এই করিডরের যথাযথ রিডিং কোয়ালিটি নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রকল্পের গুণগতমান ও পরিমাণ শতভাগ নিশ্চিত করতে সবাইকে সচেষ্ট থাকতে হবে। এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের সজাগ হতে হবে। সূত্র: যুগান্তর