আ.খবর নিউজ ডেস্ক:
আফগানিস্তানের দরকার ছিল ৩৩৫ রান। আর বাংলাদেশের জন্য লক্ষ্য ছিল বড় ব্যবধানের জয়। ৩৩৪ রানের বড় সংগ্রহের পর সমীকরণ ছিল সহজ। এশিয়া কাপের সুপার ফোরের লড়াইয়ে টিকে থাকতে হলে কেবল জয় পেলেই হতো না, একইসঙ্গে নজর ছিল রানরেটের দিকেও। হাতের নাগাল থেকে প্রায় ছুটে যাওয়া ম্যাচে সেই কাজটাই মনে হচ্ছিল অসম্ভব। কিন্তু টাইগাররা ম্যাচে ফিরেছে। বড় ব্যবধানের জয়ে সুপার ফোরের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ।
ম্যাচটা যখনই হাতের নাগালে মনে হচ্ছিল, তখনই যেন বাংলাদেশকে এক পশলা স্বস্তি এনে দিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা নাজিবুল্লাহ জাদরানকে ফিরিয়েছেন এই স্পিনার। এরপর শরীফুলের বলে মুশফিকের দুর্দান্ত ক্যাচে সাজঘরে ফিরেছেন হাশমতউল্লাহ শহিদী। এই দুই উইকেটের পর বাংলাদেশকে খুব একটা ভাবতে হয়নি। আফগানদের মিডল অর্ডার আর লোয়ার অর্ডার গুড়িয়ে দিয়েছে দ্রুতই। জয় এসেছে ৮৯ রানে।
হারলেই টুর্নামেন্ট শেষ। এর থেকে চাপের বাক্য বোধহয় একটা দলের জন্য আর হতে পারে না। এমন সমীকরণ মাথায় নিয়েই আজ আফগানিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ। তবে মেহেদি হাসান মিরাজ-নাজমুল হোসেন শান্তর দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে সেই চাপ সামলে রানের পাহাড় গড়েছে টাইগাররা। ৩৩৫ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে ২৪৫ রানে অলআউট হয়েছে আফগানিস্তান। ফলে ৮৯ রানের জয় পেয়েছে টাইগার বাহিনী।
আফগানিস্তানের চাওয়ার তালিকায় যেটি সবার নিচের দিকে থাকার কথা, সেই রানআউটই হলো। করিম জানাত থেমেছেন বদলি ফিল্ডার এনামুল হকের সরাসরি থ্রোয়ে। অষ্টম উইকেট নেই আফগানিস্তানের, জয়ের আরও কাছে বাংলাদেশ।
লাহোরে জয়ের সুবাস পাচ্ছে বাংলাদেশ
আগের ওভারে গুলবাদিন ফেরার পর এবার তাসকিনকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে সীমানার কাছে ধরা পড়লেন মোহাম্মদ নবি। এর আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৩ রান। ২১৪ রানে সপ্তম উইকেট হারিয়ে কিছুটা হলেও ম্যাচ থেকে ছিটকে গেছে আফগানিস্তান।
গুলবাদিনকে বোল্ড করলেন শরিফুল
উইকেটে এসেই আক্রমণাত্মক শুরু করেছিলেন গুলবাদিন। ৪অতম ওভারে শরিফুলকে ছক্কা মেরে শুরু করেছিলেন। এক বল পরই আবার বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারলেন না। শেষ বলে তাকে বোল্ড করে বদলা নিলেন শরিফুল।
হাশমতউল্লাহকে ফেরালেন শরিফুল
ফিফটি করে বড় ইনিংসের পথে এগোচ্ছিলেন হাশমতউল্লাহ। তবে তাকে বেশি দূর এগোতে দিলেন না শরিফুল। এই বাঁহাতি পেসারকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে সীমানায় ধরা পড়েছেন আফগান অধিনায়ক।
আফগানিস্তানের যেই উইকেটে আসছেন, সেই জুটি গড়ায় মনযোগ দিচ্ছেন। তাতে সফলও হয়েছে তারা। এখনও পর্যন্ত টানা কোন সাফল্য পায়নি বাংলাদেশ। তবে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পাচ্ছে টাইগাররা। সেই ধারাহিকতায় আরও একটি জুটিকে বড় হতে দেয়নি বাংলাদেশ। এবার মিরাজ থামালেন নজিবুল্লাহ জাদরানকে। ১৭ রান করা এই মিডল অর্ডার ব্যাটারকে বোল্ড করেছেন মিরাজ।
২৮তম ওভারের তৃতীয় বলটি সিম-আপ ডেলিভারি ছিল হাসানের। সেখানে ব্যাট চালিয়েছিলেন ইব্রাহিম, টাইমিং হয়নি, তবে এজড হয়ে বল যায় উইকেটকিপার আর প্রথম স্লিপের মাঝামাঝিতে। স্লিপে কেউ ছিলেন না কিন্তু মুশফিক সেটিই কাভার করলেন, ডানদিকে ঝাঁপিয়ে নিলেন দুর্দান্ত এক ক্যাচ। দারুণ ব্যাটিং করছিলেন ইব্রাহিম, তার উইকেটটি তাই ছিল অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মুশফিকের অসাধারণ ক্যাচে সেটিই পেল বাংলাদেশ। ইব্রাহিম থেমেছেন ৭৪ বলে ৭৫ রান করে।
শুরু থেকেই সাবলীল ব্যাটিং করছেন। এক প্রান্ত আগলে রেখে দলকে এখনও খেলায় রেখেছেন ইব্রাহিম। পেয়ে গেছেন হাঁফ সেঞ্চুরির দেখাও। মাত্র ৫২ বলেই মাইলফলকে গেছেন তিনি।
ইব্রাহিম রান তাড়ায় আফগানদের বড় আশা এখনো, তবে অন্য প্রান্তে আরেক ব্যাটসম্যান আবারও তার গতির সঙ্গে তাল মেলাতে পারছেন না। অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ প্রথম ১৭ বলে করেছেন মাত্র ৬ রান। এখানে সেখানে বাউন্ডারি এলেও রান রেট বাংলাদেশ বোলারদের বড় একটা ঢাল হিসেবেই কাজ করছে। ২৬ ওভারে আফগানিস্তানের প্রয়োজন ২৩৪ রান, মানে ওভারপ্রতি তুলতে হবে ৯ রান।
ক্রমেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন রহমত শাহ-ইব্রাহিম জাদরান জুটি। অবশেষে রহমতকে বোল্ড করে সেই জুটি থামালেন তাসকিন। ইনিংসের ১৮তম ওভারের পঞ্চম বলটি তাসকিনের সিম-আপ ডেলিভারি ছিল। ভেতরের দিকে ঢুকা সেই বলে বড় শটের চেষ্টা করেছিলেন রহমত। তবে বলের নাগাল পাননি। ৫৭ বলে ৩৩ রান করে বোল্ড হয়েছেন তিনি, ভেঙেছে ৭৮ রানের জুটি।
শুরুতেই আফগানিস্তানকে চেপে ধরেছিল বাংলাদেশ। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসছে তারা। শেষ ৫ ওভারে তারা স্কোরবোর্ডে তুলেছে ২৬ রান। উইকেট ব্যাটিং সহায়ক, ফ্লাডলাইটের নিচে সেটি আরও বেশি হয়ে উঠতে পারে। গুরবাজের উইকেটের পর রহমত শাহ ও ইব্রাহিম জাদরানের জুটিতেই উঠেছে ৫০ রান।
সুপার ফোরে যাওয়ার লড়াইয়ে থাকতে গেলে এ ম্যাচে জয়ের বিকল্প নেই বাংলাদেশের। তবে আফগানিস্তানকে যদি ২৭৯ রানের মধ্যে আটকাতে পারে বাংলাদেশ, তাহলে সুপার ফোরে যেতে আর পরের ম্যাচের ফলের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না। সরাসরি পরের রাউন্ডে জায়গা করে নেবে তারা। তাই সংগ্রহটা তিনশোর্ধ্ব হলেও আফগানদের ২৭৯ রানের মধ্যেই আটকে রাখতে চাইবে বাংলাদেশ। সেই লক্ষ্য অন্তত শুরুর পাওয়ার প্লেতে সফল বাংলাদেশ। ১০ ওভার শেষে ১ উইকেটে ৩৭ রানের বেশি তুলতে পারেনি আফগানরা। সূত্র: ঢাকা পোস্ট