আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
মালিতে দশকব্যাপী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অবদান রাখা ৪৬০ জনেরও বেশি মিসরীয় সৈন্যকে দেশটি থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ জাতিসংঘের এই শান্তিরক্ষা মিশন শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। সেই সময়সীমার মাঝেই আফ্রিকার দেশটি থেকে শান্তিরক্ষীদের তুলে নেওয়া হচ্ছে বলে বুধবার জাতিসংঘ জানিয়েছে।
সংস্থাটি বলেছে, মিশনের অন্যতম বড় ভূমিকা পালন করা বাংলাদেশ, সেনেগাল, বুরকিনা ফাসো এবং আইভরি কোস্টের সৈন্যরাও আগামী দিনে দেশটি ছাড়বেন।
গত জুনে মালির ক্ষমতাসীন জান্তা সরকার জানায়, মালিতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন গত এক দশকে আল-কায়েদা ও ইসলামিক স্টেট (আইএস) গোষ্ঠীর সাথে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় জিহাদিদের দমনে ব্যর্থ হয়েছে। যে কারণে মিশনের ১৫ হাজার আন্তর্জাতিক সৈন্যকে আর স্বাগত জানানো হবে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শান্তিরক্ষীদের প্রত্যাহার করে নেওয়ায় তা মালি এবং আফ্রিকার বৃহত্তর সাহেল অঞ্চলকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।
প্রতিবেশী নাইজারে প্রেসিডেন্ট গার্ড সদস্যদের নেতৃত্বে চলমান সামরিক অভ্যুত্থান দেশটির গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজুমকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। নাইজারকে এই অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদ এবং সশস্ত্র সহিংসতা প্রতিরোধের প্রচেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অংশীদার হিসাবে দেখা হয়।
নাইজারের অস্থিতিশীলতায় নিরাপত্তা নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগের মাঝে মালিয়ানরা দেশটিতে অর্থনৈতিক পতনের আশঙ্কা করছেন। জাতিসংঘের মিশনের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির প্রায় ৯০০ বেসামরিক নাগরিক জাতিসংঘের মিশনে সরাসরি নিযুক্ত রয়েছেন।
বেসরকারি সংস্থা ও থিঙ্ক ট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের মতে, মালিতে নিযুক্ত জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন (এমআইএনইউএসএমএ) দেশটিতে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা ও বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। দেশটি থেকে মিশন প্রত্যাহার করে নেওয়ায় সেখানে অরাজকতা তৈরি হতে পারে।
জাতিসংঘের এই মিশনকে আগস্টের মাঝামাঝিতে প্রত্যাহারের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে হবে। মার্কিন বার্তা সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) জাতিসংঘের একটি খসড়া পরিকল্পনার কপি পেয়েছে।
এতে দেখা গেছে, আগামী ডিসেম্বরের মাঝে দেশটির রাজধানী থেকে মিশনের প্রধান কার্যালয় গুটিয়ে নেওয়া হবে। তার আগে দেশটির ১৪টি অবস্থানে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের ঘাঁটিগুলোও একের পর এক প্রত্যাহার করে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের মতে, ২০১৯ সাল থেকে ২০২১ সালের মাঝে মালির অতিরিক্ত প্রায় পৌনে ৩ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যের মুখোমুখি হন। দেশটির কিছু অংশে নিম্ন মজুরি ও ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির কারণে এসব মানুষ মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে হিমশিম খান।
ওই সময় দেশটির ২ কোটি ২৫ লাখ মানুষের প্রায় অর্ধেকই দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছিলেন। তবে এই চিত্র গ্রামীণ এলাকায় ছিল আরও ভয়াবহ; যেখানে অনেক মানুষের অর্থ উপার্জনের একমাত্র বিকল্প কৃষি। সশস্ত্র সংঘাত আর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দেশটির মানুষের জীবন চরম হুমকির সম্মুখীন হয়। তবে জাতিসংঘ মিশনের প্রত্যাহার দেশটির রাজধানী বামাকোর মতো অন্যান্য বড় শহরেও প্রভাব ফেলবে।
সাহেল অঞ্চলের অন্যান্য দেশের মতো মালিও কয়েক বছর ধরে ইসলামি চরমপন্থীদের বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণে রীতিমতো লড়াই করছে।ফরাসি নেতৃত্বাধীন সামরিক বাহিনীর সহায়তায় ২০১৪ সালে পরিচালিত এক অভিযানে মালির উত্তরাঞ্চলীয় শহরগুলোতে সশস্ত্র বিদ্রোহীরা ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে এই বিদ্রোহীরা মরুভূমিতে পুনরায় সংগঠিত হয় এবং মালির সেনাবাহিনী ও তার সহযোগীদের ওপর আক্রমণ শুরু করে।
এর কয়েক মাস পর দেশটিতে পৌঁছান জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা। যা বিশ্বের অন্যতম বিপজ্জনক এক মিশন হয়ে ওঠে শান্তিরক্ষীদের জন্য। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সাল থেকে দেশটিতে অন্তত ১৭০ জন শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন।