আ.খবর নিউজ ডেস্ক :বাংলাদেশ সব দেশের সঙ্গেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চায় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, কিন্তু কেউ এদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, তা বরদাশত করা হবে না। বিএনপি-জামায়াতকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে বর্ণানা করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ প্রতিশোধ পরায়ণ দল হলে বিএনপি-জামায়াতের অস্তিত্বই থাকতো না।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলসহ বিভিন্ন সময়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের প্রাণহানি ও নির্যাতনের যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেসব বিষয়ে বিচার নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীদের কাজ করার নির্দেশনা দেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘অগ্নি-সন্ত্রাস, মানুষ পুড়িয়ে মারা, পুলিশ মারা, বিভিন্ন সময় আমাদের নেতাকর্মীদের হত্যা করা, বহু আসামি এখনও ঘুরে বেড়ায়। এরা যেন ঘুরে বেড়াতে না পারে। এদের যেন যথাযথ শাস্তি হয়। এদের যেন বিচার হয়।’
রোববার (২ জুলাই) গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ জনগণের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
নিজ জেলায় দুই দিনের সফরে গত শনিবার সকালে গণভবন থেকে সড়কপথে কোটালীপাড়া যান প্রধানমন্ত্রী। সেদিন তিনি নবনির্মিত কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় উদ্বোধন করেন।
কোটালীপাড়ার কর্মসূচি শেষে দুপুরের পর বঙ্গবন্ধুকন্যা টুঙ্গিপাড়ায় নিজের গ্রামের বাড়িতে যান এবং রাতে সেখানে অবস্থান করেন। দ্বিতীয় দিন রোববার টুঙ্গিপাড়ার কর্মসূচি শেষে বিকেলে গণভবনে ফিরে আসেন প্রধানমন্ত্রী। এ সফরে তার সঙ্গে ছিলেন তার ছেলে ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
বিএনপি-জামায়াতকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে বর্ণনা করে টুঙ্গিপাড়ায় ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে কারও প্রতি প্রতিশোধ নিতে চায়নি। প্রতিশোধ যদি নিতে যেতাম, তাহলে ওই বিএনপি বা জামায়াতের অস্তিত্ব থাকত না- এটা বাস্তবতা।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের যে সন্ত্রাসী রূপ, এটা তো এদেশের মানুষ দেখেছে। এদের কাছে রাজনীতি বলে কিছু নেই, ক্ষমতা হচ্ছে তাদের অর্থ বানানোর মেশিন; ক্ষমতা হচ্ছে জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা।’
বিএনপির হাতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নির্যাতিত হওয়ার বর্ণনা দিতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০১-এ ক্ষমতায় এসে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান- কেউই বাদ যায়নি তাদের অত্যাচার-নির্যাতন থেকে, মানুষকে গুলি করে মারা, হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে মারা, চোখ তুলে নেয়া, হাত কেটে নেয়া- এমন কোন সন্ত্রাসী কাজ নাই বিএনপি না করেছে।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসী দল- যদি আবার ক্ষমতায় আসে, আবার এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে; এ দেশের সর্বনাশ করে দিবে। কাজেই সেটা যেন তারা করতে না পারে, সেজন্য সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। আমরা চাই আমাদের দেশ এগিয়ে যাক।’
বিএনপি একটা সন্ত্রাসী সংগঠন- কানাডার ফেডারেল কোর্ট এই কথাই বলেছিল উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘ওই সন্ত্রাসী সংগঠনের কোনও অধিকার নেই বাংলাদেশের মানুষ নিয়ে কথা বলার।’
নালিশ করে বালিশ পাবে সব দেশের সঙ্গেই বাংলাদেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চায় জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের পররাষ্ট্রনীতি খুব ভালো- সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। আমরা সেই নীতিই মেনে চলি। কিন্তু আমাদের উন্নয়নে বা আমাদের অগ্রযাত্রায় কেউ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করুক, সেটা আমরা চাই না, সেটা আমরা বরদাশত করব না।’
বিরোধীদল বিএনপি বিদেশিদের কাছে ‘নালিশ’ করে আসছে উল্লেখ করে এমন প্রবণতার সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কিছু লোক আছে, কথায় কথায় নালিশ করে, তো নালিশ করে কি হয়! ওই যে কথায় আছে না- নালিশ করে বালিশ পাবে। ওরা কিন্তু ওটাই পাওয়ার যোগ্য।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘যাদের নিজের মাটিতে খুঁটায় জোর থাকে না, নিজের দেশের মানুষের ওপর আস্থা-বিশ্বাস যাদের থাকে না, দেশের মানুষের কল্যাণ করতে পারে না; ওই তারাই যেয়ে ওখানে... আর নালিশ। আর ওই সোশ্যাল মিডিয়াতে নানা কথা, গুজব ছড়ানো ওই তারা করে বেড়ায়।’
এত সাহস থাকলে দেশে আসে না কেন?
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ফিউজিটিভ (পলাতক) হয়ে ওই লন্ডনে বসে এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় বড় বড় কথা বলে। চোরের বড় গলা- কথায় আছে, সেই চোরের বড় গলাই আমরা শুনি। এত সাহস থাকলে বাংলাদেশে আসে না কেন? তা তো আসতে পারে না। ওই সাহস তো দেখাতে পারে না।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘১০ ট্রাক অস্ত্র, একুশে অগাস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমাদের হত্যার চেষ্টা, আইভী রহমানসহ আমাদের ২২ জন নেতাকর্মী হত্যা করেছে- মানি লন্ডারিং, দুর্নীতি এমন কোনও অপকর্ম নাই যে না করে গেছে। আজকে সাজাপ্রাপ্ত, পলাতক।’
বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষের মাটি ও মানুষের সংগঠন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া সংগঠন। এই সংগঠন দিয়ে তিনি দেশকে স্বাধীন করেছেন। এই সংগঠন দিয়ে তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তুলে স্বল্পোন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলেছিলেন।’
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণের প্রত্যয় পুর্নব্যক্ত করে তার জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবার দোয়া-আর্শীবাদ চাই- আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই। ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, এখন আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব।’
উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে কাজ করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা- এটাই আমাদের লক্ষ্য। আমার বাবা যে কাজটা শুরু করেছিলেন সেটা সম্পন্ন করা।’
তিনি বলেন, ‘আমিও আমার বাবার মতো জীবনটা উৎসর্গ করেছি এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে। আজকে সেই কষ্ট-ব্যথা বুকে নিয়েই আমার প্রতিজ্ঞা হচ্ছে- এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে যেন আর কখনও কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে, এদেশ হবে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত, উন্নত, সমৃদ্ধ একটি জাতি।’
মতবিনিময় সভায় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ আবুল বশার খায়ের। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মো. বাবুল শেখ।
মতবিনিময়কালে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, জনপ্রতিনিধিরা টুঙ্গিপাড়ার বিভিন্ন উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে শেখ হাসিনা বয়সের কথা তুলে ধরে অবসরে যাওয়ার কথা বলেন। এ সময় নেতাকর্মীরা তাকে দেশ ও জনগণের কল্যাণের কথা চিন্তা করে দায়িত্বপালন করে যাওয়ার অনুরোধ করেন।