রাজশাহী প্রতিনিধি : পাওনাদারকে মারধর করে ইউনিফর্ম পড়ে এসে দেখে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের সোর্স আলিমের বিরুদ্ধে।
এঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার (৩০জুন) রাত ৮টার দিকে শিরোইল কলোনি ৪ নং গলির শেষ মাথায় এ ঘটনা ঘটে। এঘটনায় ভুক্তভোগীর শশুর জিন্নাফ আলী বাদি হয়ে চন্দ্রিমা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগের বরাত দিয়ে জানা গেছে, গত চার বছর পূর্বে জিন্নাফ আলীর কাছ থেকে তার ছেলে আতিকুল হাসানের জন্য বাংলাদেশ রেলওয়েতে চাকরির জন্য নগদ চার লাখ টাকা নিয়েছিলেন শিরোইল কলোনী ৪ নং গলির ফজল আলী নামের এক ব্যক্তি।
চাকরি দিতে ব্যার্থ হলে দুই লাখ টাকা ফেরতও দিয়েছেন তিনি। এবং বাকি দুই লাখ টাকার অগ্রনী ব্যাংক লিমিটেডের একটি চেক প্রদান করেন। ঈদের পরের দিন সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করার কথাছিলো ফজল আলীর। শুক্রবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে জিন্নাফ আলীর জামাই মাহফুজ আলী মানিক (৩১) এ টাকা চাইতে গেলে টাকা দিতে অস্বীকার করে এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ফজল আলী ও পুলিশের সোর্স আব্দুল আলীম। এসময় মানিক গালিগালাজ করতে নিষেধ করলে আলীম ধাক্কা দিয়ে মাটির ওপর ফেলে দেয় এবং তারা ব্যাপক মারধর করে। পরে স্থানীয়রা মানিককে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। বর্তমানে তিনি রামেকের ২ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
স্থানীয় প্রতক্ষ্যদর্শী সোহান, সুমন, শামীম, ও দোকানদার পারভেজ আলী জানান, মানিককে মারধর করার পর পুলিশের সোর্স আব্দুল আলীম প্রকাশ্যে ইউনিফর্ম পড়ে এসে দেখে নেয়ার হুমকিসহ তার শশুর জিন্নাফ আলীকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করে এবং ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ইউনিফর্ম পড়ে আসার বিষয়টি স্থানীয়দের মধ্যে এটি রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।
খোজ নিয়ে জানাগেছে, আব্দুল আলীম পুলিশের কথিত সোর্স তার বিরুদ্ধে নারী দিয়ে ব্ল্যাক মেইলসহ ভুয়া পুলিশ পরিচয়ে স্থানীয়দের হয়রানি করার অভিযোগ পুরোনো হলেও নিজ বাড়িতে তিনটি মেয়ে রেখে মিনি পতিতালয় বানিয়ে ফেলেছেন আব্দুল আলীম। দিন-রাত সোমানে অজ্ঞাত ব্যক্তির যাতায়াত বাদেও সাদা পোশাকে প্রশাসনের লোকজনেরও যাতায়াত রয়েছে তার বাড়িতে।
এ ব্যাপারে ১৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌহিদুল হক সুমন বলেন, আলীম একজন পুলিশের কথিত সোর্স। তার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে আমার কাছে। তার বাসায় ভাড়াটিয়া হিসেবে কয়েকটি মেয়েকে জায়গা করে দেয়। এরপর চলে অসামাজিক কার্যকোলাপ। তাদের দিয়ে দেহ ব্যবসাসহ সাধারণ মানুষদের জিম্মি করে ব্ল্যাক মেইল করেন এবং বিকাশের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। তাকে একাধিকবার নিষেধ করার পরও তার পুরোনো কার্যকোলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। বিষয়গুলি নিয়ে আরএমপি পুলিশ কমিশনার আনিসুর রহমানের সাথে কথা বলে আলীমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানানো হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিরোইল কলোনী ৪ নং গলির এক ব্যক্তি বলেন, আলীম তার বাসার দুটি নারী ভাড়াটিয়া দিয়ে আমাকে ফাসিয়ে ৪০ হাজার টাকা আদায় করে। নিজের ইজ্জতের ভয়ে এতোদিন মুখ বন্ধ করেছিলাম।
৪ নং গলির আকলিমা বেগম নামের এক সিডিসি সদস্য জানান, পুলিশের সোর্স আলীম একদিন ফোন করে আমাকে বলে আমি নাকি মাদকের ব্যবসা করি। এ মুহুর্তে ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে না দিলে গ্রেফতার করার হুমকি প্রদান করে সে। পরে এঘটনায় আকলিমা বাদি হয়ে আলীমের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
হাজরাপুকুর এলাকার সাদ্দাম হোসেন বলেন, ইয়াবা দিয়ে আমাকে ফাসানোর ব্যার্থ চেষ্টা করছিলো পুলিশের সোর্স আলীম। এসময় স্থানীয়দের তোপের মুখে আমাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ।
এব্যাপারে চন্দ্রিমা থানার ওসি তদন্ত মামুনুর রশিদ বলেন, উভয় পক্ষের অভিযোগ পাওয়া গেছে, তবে আলীম থানার সোর্স না বলে দাবি করেন তিনি। এছাড়া আলীমের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেলে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান ওসি।