নিজস্ব প্রতিবেদক :
দীর্ঘ প্রচার-প্রচারণার পর রাত পোহালেই (বুধবার) রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হবে। এরই মধ্যে ভোট গ্রহণের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। বুধবার সকাল ৮টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হবে, বিরতিহীনভাবে চলবে বিকেল চারটা পর্যন্ত।
এরপর ফলাফল ঘোষণা করা হবে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে।
রাসিক নির্বাচনে ১৫৫টি ভোট কেন্দ্র রয়েছে। এবারই প্রথম রাসিকের সব কেন্দ্রেই ইভিএমএ ভোট গ্রহণ হবে। ভোট গ্রহণের জন্য রাসিকের ৩০টি ওয়ার্ডের কেন্দ্রেগুলোতে পাঠানো হয়েছে নির্বাচনী সরঞ্জাম। নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্যাপন প্রস্তুতি নিয়েছে আইনশৃংখলা বাহিনী। এবার নির্বাচনে নেয়া হয়েছে সাত স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে নগরীর নিউ ডিগ্রী কলেজ থেকে নির্বাচনী সরঞ্জামাদি পাঠানো শুরু হয়। প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও ভোট কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তারা এসব সরঞ্জাম কেন্দ্রে নিয়ে যান। ১৫৫টি কেন্দ্রে ইভিএম মেশিন থাকছে প্রায় ১ হাজার ৮শ’ টি। ভোটের পর্যবেক্ষক হিসাবে থাকবেন নির্বাচন কমিশনের ১০ জন।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন জানান, নির্বাচনে ৭ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনের দিন সিটি করপোরেশন এলাকায় টহলে থাকবে ২৫০ জন র্যাব। মাঠে বিজিবি থাকবে ১০ প্লাটুন। নির্বাচনের নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করবেন ৩ হাজার ৫১৪ জন পুলিশ, ১ হাজার ৯৩৫ আনসার সদস্য। থাকবেন ৩০জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ১০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। ভোটগ্রহণের দায়িত্বে থাকবে ৩ হাজার ৬শ’ ১৪ জন কর্মকর্তা। ভোট কেন্দ্রগুলোতে স্থাপন করা হয়েছে ১ হাজার ৫৬০টি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। এবার রাসিকের ১৫৫টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে ১৪৮টি ভোট কেন্দ্রকে নিহ্নিত করা হয়েছে। এবার রাসিক নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী রয়েছেন ৪ জন। সাধারণ ৩০টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ১১১জন ও সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর প্রার্থী ৪৬ জন। মোট ভোটার ৩ লাখ ৫১ হাজার ৯৮২ জন।
এদিকে নির্বাচন উপলক্ষে মঙ্গলবার আইনশৃংখলা বাহিনীর পক্ষে পৃথকভাবে ব্রিফিং করা হয়েছে। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে মঙ্গলবার সকালে র্যাব ও পুলিশ সদর দপ্তরে প্রেস ব্রিফিং করা হয়।
র্যাবের পক্ষে জানানো হয়, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করতে র্যাব প্রস্তুত। ভোর ৬টা থেকে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৩০০ জন র্যাব সদস্য মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স, সাদা পোশাকে গোয়েন্দা এবং বোমা নিস্ক্রিয়কারী হিসেবে নির্বাচনে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে নিয়োজিত থাকবে। র্যাব-৫ এর ১৫টি মোবাইল ও স্ট্রাইকিং পেট্রোল, স্ট্রাইকিং ফোর্স কমান্ডারসহ ১০ টি জীপ, ২টি স্ট্রাইকিং ফোর্স রিজার্ভ টিম, সাদা পোশাকে গোয়েন্দা দল, সুপার মোবাইল মোটরসাইকেল টিম এবং এ্যাম্বুলেন্স নির্বাচনের দিন আইন-শৃংখলা নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত থাকবে। যেকোন উদ্বুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রয়নের জন্য র্যাব-৫ এর বোম ডিসপোজাল ইউনিট প্রস্তুত রয়েছে। র্যাব সদর দপ্তরে র্যাবের স্পেশাল ফোর্স হেলিকাপ্টারসহ যেকোন পরিস্থিতিতে মোতায়েন এর জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়াও সার্বিক পরিস্থিতি তদারকির জন্য নির্বাচন সেল এবং কন্টোল রুম স্থাপন করা হয়েছে।
অপরদিকে রাজশাহী মহানগর পুলিশের পক্ষে সকালে আইনশৃংখলা রক্ষায় প্রস্তুতি নিয়ে ব্রিফিং প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়। পুলিশ লাইন্স মাঠে নিরাপত্তা বিষয়ক ব্রিফিং প্যারেডে নির্বাচনের সার্বিক বিষয় জানান পুলিশ কমিশনার আনিসুর রহমান। তিনি বলেন, ১৪৮ টি গুরুত্বপূর্ণ ও ৭ টি সাধারণ ভোট কেন্দ্র গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া হয়েছে।
প্রতিটি কেন্দ্র এলাকায় ৫ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে। নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে আইন-শৃঙ্খলা পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি, র্যাব ও আনসার সদস্যবৃন্দ দায়িত্ব পালন করবে। নির্বাচন পূর্ববর্তী এবং নির্বাচন পরবর্তী সময়ে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুতির কথা তিনি তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন এবং সকলের সহযোগিতায় একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠানের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
রাসিক নির্বাচনে এবার মেয়র প্রার্থী রয়েছেন ৪ জন। সাধারণ ৩০টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ১১১জন ও সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর প্রার্থী ৪৬ জন। মোট ভোটার ৩ লাখ ৫১ হাজার ৯৮২ জন।
রাসিক নির্বাচনে চারজন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনিত মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন (নৌকা প্রতিক), জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপন (লাঙ্গল প্রতিক), ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী মুর্শিদ আলম (হাতপাখা প্রতিক) ও জাকের পার্টির লতিফ আনোয়ার গোলাপফুল প্রতিক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।