নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী
আসন্ন রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে হত্যা, মাদক, ভূমিদস্যুতা, চোরাচালান ও বিস্ফোরক আইনে মামলার আসামিরাও কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন। মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে ১১৭ জন প্রার্থী। তবে এদের মধ্যে অন্তত ৪০ জনই কোনো না কোনো মামলার আসামি। একেকজনের বিরুদ্ধে একটি থেকে সর্বোচ্চ ২০টি পর্যন্ত মামলা রয়েছে। কাউন্সিলরপ্রার্থীদের মধ্যে অপর ১৮ জন আগে মামলার আসামি ছিলেন। তবে তারা মামলা থেকে অব্যাহতি কিংবা খালাস পেয়েছেন। অনেকেই বাদীর সঙ্গে আপস-মীমাংসার মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তি করেছেন। কেউ কেউ আবার মামলার তথ্য গোপন করেছেন হলফনামায়। তবে প্রার্থী হওয়ার পর একজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী মামলা হয়েছে বিশেষ ক্ষমতা আইনে। বিস্ফোরক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় আসামিরা দাবি করেছেন, রাজনৈতিক কারণে তাদের নামে ‘মিথ্যা’ মামলা দেওয়া হয়েছে।
সুশাসন বিশ্লেষক সুব্রত কুমার পাল বলছেন, কারও বিরুদ্ধে মামলা থাকতেই পারে। তবে দণ্ডপ্রাপ্ত হলে একটা নির্দিষ্ট সময়ের আগে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। কিন্তু কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে মাদক, চোরাচালান বা ভূমিদস্যুতার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তাদের সমাজের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এ ধরনের ব্যক্তিদের প্রার্থিতা সমাজের জন্য অশনিসংকেত। এরা সমাজের কোনো কাজে লাগে না। বরং ক্ষতিকর। সমাজটাকে বদলাতে হলে কালো টাকার মালিকদের প্রত্যাখ্যান করতে হবে। এক্ষেত্রে ভোটাররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। তারা সমাজের জন্য উপকারী ব্যক্তিকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করবেন। এটিই তাদের নাগরিক দায়িত্ব।
মহানগরীর ১৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরপ্রার্থী জুয়েল রানা টিটুর বিরুদ্ধে বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের মামলা থাকলেও তিনি হলফনামায় তা গোপন করেছেন। মহানগরীর চন্দ্রিমা থানার শিরোইল কলোনি এলাকার শাকিলা জাহান রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (চন্দ্রিমা থানা আমলি) আদালতে গত ৪ এপ্রিল মামলাটি দায়ের করেন। এ মামলার ১ নম্বর আসামি জুয়েল রানা টিটু। কিন্তু নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামায় মামলার বিষয়টি উল্লেখ করেননি তিনি। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে জুয়েল রানা টিটু মামলার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘বর্তমানে মামলটির তদন্ত করছে পিবিআই। আর মামলাটি মিথ্যা। এ কারণে হলফনামায় উল্লেখ করিনি।’
এদিকে সিটি করপোরেশনের ১০টি সংরক্ষিত আসনের জন্য বৈধ প্রার্থী রয়েছেন ৪৬ জন। তাদের বেশির ভাগেরই নামে অবশ্য কোনো মামলা নেই। দুজনের নামে মামলা থাকলেও তারা খালাস পেয়েছেন।
হলফনামার তথ্যানুযায়ী, সবচেয়ে বেশি ২১টি মামলা চলমান রয়েছে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরপ্রার্থী মো. কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে বিচারাধীন রয়েছে ১২টি মামলা। তদন্তাধীন রয়েছে ছয়টি। কামরুজ্জামান ইতোমধ্যে দুটি মামলা থেকে বেকসুর খালাস পেয়েছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা বর্তমান মামলাগুলোর বেশির ভাগই বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইনের। মহানগরীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী আফজাল হোসেনের মামলা আছে ১৪টি। এ ছাড়া আগের তিনটি মামলায় তিনি খালাস পেয়েছেন। তার মামলাগুলোও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইনের। নগরীর ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী জামায়াত নেতা আবদুস সামাদের মামলার সংখ্যা ছয়টি। এর মধ্যে দুটি বিচারাধীন, চারটির তদন্ত চলছে। ইতোমধ্যে তিনি চারটি মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। মহানগরীর ৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী ও বর্তমান কাউন্সিলর মতিউর রহমানের নামেও একটি মামলা আছে। ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী ও বর্তমান কাউন্সিলর আশরাফুল হাসান বাচ্চু দুটি বিচারাধীন মামলার আসামি। ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী আখতার আহম্মেদ বাচ্চু একটি, ২৯ নম্বরের আবু জাফর বাবু একটি ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের রবিউল ইসলাম চারটি বিচারাধীন মামলার আসামি। ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী আলিফ আল মাহামুদ লুকেন তিনটি বিচারাধীন মামলার আসামি। আগে তিনি ছয়টি মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন। ১৫টি মামলা থেকে আগে খালাস পেলেও এখনো একটি মামলা চলমান ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী রেজাউন নবী আল মামুনের। ১০ নম্বরের প্রার্থী রাজ্জাক আহমেদ রাজনের মামলার সংখ্যা দুটি।
মহানগরীর ৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী জহিরুল ইসলাম রুবেলের নামে মামলা আছে তিনটি। এর মধ্যে একটি অস্ত্র মামলার আসামি তিনি। তবে একটি হত্যা মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন ২০১৮ সালে। মহানগরীর ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী আশরাফ হোসেন বাবু তিনটি মামলার আসামি। এর মধ্যে দুটি বিচারাধীন। একটি মামলার কার্যক্রম স্থগিত। একই ওয়ার্ডের প্রার্থী নুরুজ্জামান টিটোর নামে আছে হত্যাসহ দুটি মামলা। ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী ও বর্তমান কাউন্সিলর এবং শ্রমিকনেতা মাহাতাব হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুটি মামলা চলছে শ্রম আদালতে।
মহানগরীর ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী ও বর্তমান কাউন্সিলর বেলাল আহমেদের বিচারাধীন মামলা আছে দুটি। নগরীর ৩০ নম্বরের প্রার্থী ও বর্তমান কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম পিন্টুর বিরুদ্ধে বিচারাধীন মামলা একটি। ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান মাদক মামলার আসামি। তবে অপর একটি মামলায় খালাস পেয়েছেন তিনি। মহানগরীর ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী নোমানুল ইসলামেরও মামলা আছে দুটি। ২৬ নম্বরের মহিউদ্দিন বাবুর বিচারাধীন মামলা চারটি। তিনটিতে খালাস পেলেও এখনো দুটি মামলা চলছে ২৯ নম্বরের প্রার্থী মাসুদ রানার। আদালতে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী রুহুল আমিনের বিচার চলছে ৮টি মামলায়। ৩ নম্বরের প্রার্থী বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমানের বিচারাধীন মামলা তিনটি। ৫ নম্বরের হামিদুল ইসলাম সুজনের বিচারাধীন মামলা দুটি। ২ নম্বরের প্রার্থী মুখলেসুর রহমানের মামলা সাতটি।
এ ছাড়া নগরীর ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন বিচারাধীন ৯টি মামলার আসামি। একই ওয়ার্ডের আনারুল ইসলাম ও একলাস হোসেন লাকি একটি করে মামলার আসামি। ১৪ নম্বরের প্রার্থী আনোয়ার হোসেন ও মুরাদ আলী; ৬ নম্বরের মো. বদিউজ্জামান, ২৬ নম্বরের মখলেসুর রহমান খলিল, ২৭ নম্বরের মো. মনিরুজ্জামান, ৮ নম্বরের জানে আলম খান জনি, ২৪ নম্বরের জাহাঙ্গীর আলম ও ১০ নম্বরের আমিনুল ইসলাম একটি করে মামলার আসামি। এ ছাড়া ২৭ নম্বরের প্রার্থী ও বর্তমান কাউন্সিলর আনোয়ারুল আমিন আযব তিনটি বিচারাধীন মামলার আসামি। ১১ নম্বরের প্রার্থী আবু বাক্কার কিনুর নামেও জমিজমা-সংক্রান্ত একটি মামলা আছে। আর ১৪ নম্বরের মো. টুটুলের মামলার সংখ্যা তিনটি। ২৫ নম্বরের প্রার্থী ও বর্তমান কাউন্সিলর তরিকুল আলম পল্টুর বিচারাধীন মামলা তিনটি।
এদিকে নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন দাখিলের পর বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়েছে ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরপ্রার্থী মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। সংঘবদ্ধ হয়ে নির্বাচন বানচালের লক্ষ্যে গোপন বৈঠক করার অভিযোগে রাজপাড়া থানার এসআই আব্দুল জলিল বাদী হয়ে মনিরুলসহ বিএনপির ১২ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেন। সূত্র: আমাদের সময়