নিউজ ডেস্ক :দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আরও ৪৯টি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপন করতে যাচ্ছে সরকার। তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে এসব ফায়ার স্টেশন নির্মাণ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া আরও সাতটি স্টেশন পুনর্নির্মাণ করা হবে।
‘দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ৫৬টি (৪৯টি স্টেশন স্থাপন ও সাতটি পুনর্নির্মাণ) ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপন প্রকল্প’-এর মাধ্যমে এসব স্টেশন স্থাপন করা হবে। গত ২৭ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রকল্প যাচাই-বাছাই কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভার কার্যবিবরণী অনুযায়ী, প্রকল্পের আওতায় দেশের গুরুত্বপূর্ণ ৪৯টি স্থানে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপন এবং সাতটি স্টেশন পুনর্নির্মাণ করা হবে। যার প্রাক্কলিত ব্যয় দুই হাজার ৫৮২ কোটি টাকা। প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে ২০২৩ সালের মে থেকে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে কার্যবিবরণীতে বলা হয়, দেশব্যাপী সেবা সম্প্রসারণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্রকল্প এলাকায় প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট যেকোনো দুর্যোগে তাৎক্ষণিক সাড়াদান নিশ্চিত করা এবং জীবন-সম্পদের ক্ষয় হ্রাস করা। এ লক্ষ্য অর্জনে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য দেশের আটটি বিভাগের ২৭টি জেলার ৫৬টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের আওতাধীন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট যেকোনো দুর্যোগে প্রথম সাড়াদানকারী জাতীয় প্রতিষ্ঠান। এ সংস্থার প্রতিটি সদস্য যেকোনো দুর্যোগে সবার আগে সবার পাশে থেকে ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
বিভাগভিত্তিক ক্যাটাগরি অনুযায়ী প্রস্তাবিত ফায়ার স্টেশনগুলো তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো- ‘বিশেষ’, ‘এ’ ও ‘বি’ ক্যাটাগরি। যেসব এলাকায় কেমিক্যাল কারখানা ও ইপিজেড সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয় সেগুলো ‘বিশেষ’ ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিভাগীয় শহর, জেলা শহর এবং গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা শহরগুলোতে ‘এ’ ক্যাটাগরির ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপন করা হবে।
এছাড়া ‘বি’ক্যাটাগরি ধরা হয়েছে গ্যাপ এলাকাগুলোর গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলোতে। যেখানে নিকটবর্তী কোনো ফায়ার স্টেশন নেই এবং নদীপথ এলাকাগুলোতে, যেখানে দুর্ঘটনা বেশি হয়।
‘এ’ ও ‘বি’ ক্যাটাগরির স্টেশনের ক্ষেত্রে জমির পরিমাণ এক একর এবং ‘বিশেষ’ ক্যাটাগরির ক্ষেত্রে জমির পরিমাণ ১.৫ একরের প্রস্তাব করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর এবং গণপূর্ত অধিদপ্তর সম্মিলিতভাবে প্রকল্পের ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) তৈরি করেছে। ২০২২ সালের রেট শিডিউল অনুযায়ী প্রাক্কলিত ব্যয়ের সার-সংক্ষেপও তৈরি করা হয়েছে।
সভার কার্যবিবরণী অনুযায়ী, প্রতিটি নির্মাণাধীন ফায়ার স্টেশনের জনবল পদ রাজস্ব খাত থেকে সৃষ্টি করা হবে। সভায় সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, এটি সময়াবদ্ধ প্রকল্প হওয়ায় মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভার মাধ্যমে কিছু পর্যবেক্ষণ আসবে এবং প্রত্যেকটি স্টেশনের বিস্তারিত বর্ণনা ও যন্ত্রপাতির বর্ণনা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরকে দিতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (পরিকল্পনা) মো. ইকবাল বাহার বুলবুল বলেন, আমরা মন্ত্রণালয়ে প্রকল্পের ডিপিপি সাবমিট করেছি। ডিপিপি নিয়ে যাচাই-বাছাই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
‘ডিপিপিতে ৫৪টি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপন ও পুনর্নির্মাণের প্রস্তাব ছিল। কমিটির সভায় আরও দুটি বাড়ানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী ৫৬টি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপন করা হবে।’
সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর একটা নির্দেশনা আছে। সে নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের সব উপজেলায় ফায়ার স্টেশন স্থাপন করা হবে। ওই নির্দেশনার আলোকে দেশে ৫৬টি স্টেশন স্থাপন ও পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবও প্রণয়ন করা হয়েছে।
‘যাচাই-বাছাই কমিটির একটি সভাও হয়েছে। সেখানে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সে অনুযায়ী প্রকল্পটি পুনর্বিন্যাস করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে।’