আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
যুক্তরাষ্ট্র ও তার কোয়াড মিত্ররা ঘোষণা করেছে যে, রাশিয়াকে দায়মুক্তির সাথে যুদ্ধ করার সুযোগ দেওয়া হবে না এবং ইউক্রেনে যুদ্ধ করার জন্য দেশটিকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।
শুক্রবার (৩ মার্চ) নয়াদিল্লিতে একটি বৈঠকের পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনসহ ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এক বিবৃতিতে একথা বলেন।
শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। মূলত টানা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে যুদ্ধ করছে রাশিয়া। অন্যদিকে রুশ আগ্রাসনের শুরু থেকেই ইউক্রেনকে অস্ত্রসহ সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্রসহ কিয়েভের পশ্চিমা মিত্ররা।
তবে যুদ্ধ এখনও চলছে এবং বিভিন্ন সময়ই ইউক্রেনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে রাশিয়া।
অবশ্য তথাকথিত কোয়াড গ্রুপ শুক্রবার বলেছে, ইউক্রেনে পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার বা ব্যবহারের বিষয়ে রাশিয়ার হুমকি ‘অগ্রহণযোগ্য’। এর আগে গত মাসের শেষের দিকে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুগান্তকারী একটি পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি স্থগিত করেন এবং পরমাণু পরীক্ষা পুনরায় শুরু করার হুমকি দেন।
শুক্রবার ভারতে অনুষ্ঠিত ফোরামের এই বৈঠকে অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেন, ‘রাশিয়া ইউক্রেনে যা করছে তা যদি আমরা মস্কোকে দায়মুক্তির সাথে করার সুযোগ দিই, তবে এটি সম্ভাব্য আগ্রাসীদের এমন একটি বার্তা দেবে যে, তারাও চাইলে যেকোনও কিছু করতে পারে।’
রয়টার্স বলছে, নয়াদিল্লিতে জি-২০ বৈঠকের ফাঁকে কোয়াড গ্রুপের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে দেখা করেন অ্যান্টনি ব্লিংকেন। আর সেখানেই তারা ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য রাশিয়াকে দোষারোপ করেন।
এর একদিন আগে নয়াদিল্লিতে ইউক্রেন সংঘাত শুরু হওয়ার পর প্রথমবারের মতো রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সাথে দেখা করেছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেন। সংক্ষিপ্ত ওই বৈঠকে তিনি মস্কোকে ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার এবং নিউ স্টার্ট পারমাণবিক চুক্তির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করার আহ্বান জানান বলে একজন সিনিয়র মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন।
অন্যদিকে রুশ বার্তাসংস্থাগুলো জানিয়েছে, ল্যাভরভ এবং ব্লিংকেন ১০ মিনিটেরও কম সময় ধরে কথা বলেছেন এবং সেসময় তারা কোনও ধরনের আলোচনায় জড়াননি বলে দাবি করেছে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এছাড়া শুক্রবারের এই বিবৃতিতে দক্ষিণ চীন সাগরে উত্তেজনা বৃদ্ধি এবং এই অঞ্চলের বিতর্কিত এলাকাগুলোকে ‘সামরিকীকরণের’ নিন্দা জানান কোয়াড মন্ত্রীরা। অবশ্য কোয়াড স্নায়ু যুদ্ধ শুরুর চেষ্টা করছে বলে নিন্দা জানিয়েছে চীন। একইসঙ্গে এই চক্রটি ‘অন্যান্য দেশকে টার্গেট করে’ কাজ করছে বলেও দাবি করেছে বেইজিং।
উল্লেখ্য, আনুষ্ঠানিকভাবে কোয়াড মূলত চতুর্পক্ষীয় নিরাপত্তা সংলাপ। ২০০৪ সালে ভারত মহাসাগরে বিধ্বংসী সুনামির পর একটি আলগা অংশীদারিত্ব গ্রুপ হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিল কোয়াড। বিধ্বংসী সেই সুনামির পর যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং ভারত; এই চারটি দেশ ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে মানবিক ও দুর্যোগ সহায়তা প্রদানের জন্য একত্রিত হয়েছিল।
এরপর ২০০৭ সালে জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে কোয়াডকে একটি আনুষ্ঠানিক রূপ দেন। কিন্তু এরপর থেকে প্রায় এক দশক এটি সুপ্ত বা অনেকটা নিষ্ক্রিয় অবস্থায় ছিল। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ার উদ্বেগের কারণেই চারদেশীয় এই জোটটি ছিল নিষ্ক্রিয়। কারণ সেসময় অস্ট্রেলিয়া মনে করতো, এই গ্রুপে তাদের অংশগ্রহণ হয়তো চীনকে বিরক্ত করবে।
এরপর ২০১৭ সালে এই গ্রুপটির পুনরুত্থান হয়। এতে করে মূলত এই অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের প্রতি পরিবর্তনশীল মনোভাবেরই প্রতিফলন ঘটে। সেই সময় থেকে প্রথমে ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং পরে জো বাইডেনের নেতৃত্বাধীন মার্কিন প্রশাসন ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের আক্রমণাত্মক বা দৃঢ় পদক্ষেপের পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে নজরদারি চালাতে কোয়াডকে মূল চাবিকাঠি হিসেবে ব্যবহার করছেন।
অন্যদিকে চীন অভিযোগ করে আসছে যে, এই গ্রুপটি নিজেকে ‘এশীয় ন্যাটো’ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে। যদিও মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর মতো কোয়াডের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে কোনো পারস্পরিক-প্রতিরক্ষা চুক্তি কার্যকর নেই।
তবে কোয়াডের একটি পরোক্ষ উদ্দেশ্যও রয়েছে। মূলত কোয়াডের সদস্য দেশগুলো স্পষ্টভাবে না বললেও নিজেদের এই পারস্পরিক অংশীদারিত্বকে চীনা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একটি প্রতিরোধ হিসাবে বোঝানো হয়ে থাকে।
২০২১ সালের মার্চ মাসে দেওয়া ‘স্পিরিট অব কোয়াড’ বা কোয়াডের রূপরেখার ঘোষণায় নেতারা বলেছিলেন, ‘আমরা বৈচিত্র্যময় দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এসেছি এবং মুক্ত ও অবাধ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য একটি একক দৃষ্টিভঙ্গিতে আমরা ঐক্যবদ্ধ।’